ভারতের নারী ক্রিকেট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ঝুলন গোস্বামীর যে অবদান, তা সীমাবদ্ধ থাকবে না স্রেফ সংখ্যা আর রেকর্ডে। তবে খেলাটা যখন ক্রিকেট, পরিসংখ্যানের গুরুত্ব এখানে বরাবরই থাকে। ঝুলন নিজেকে আলাদা করে ফুটিয়ে তুলেছেন সেখানেও। রেকর্ড বইয়ের নানা পাতায় তার উজ্জ্বল উপস্থিতি।
লর্ডসে শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ দিয়ে শেষ হয় ঝুলনের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। থেমে যায় ২০ বছরের গৌরবময় পথচলা।
২০০২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ছুটে চলার পথে ঝুলন ভারতের নারী ক্রিকেটে বয়ে এনেছেন নতুন দিনের আলো, অনুপ্রাণিত করেছেন প্রজন্মের পর প্রজন্মকে আর ২২ গজে দাপুটে বোলিংয়ে ছাপ রেখেছেন পরিসংখ্যানে।
ইতিহাসের সেরা
তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৫৫ উইকেট নিয়ে শেষ হলো ঝুলনের ক্যারিয়ার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসের সফলতম নারী বোলার তিনি।
প্রথম বোলার হিসেবে ৩০০ উইকেটের স্বাদ পান তিনি ২০১৮ সালে। এরপর এই স্বাদ পেয়েছেন আরও চার বোলার। কেউ এখনও ছাড়িয়ে যেতে পারেননি ঝুলনকে।
ওয়ানডেতে অনন্য
ঝুলনের ৩৫৫ আন্তর্জাতিক উইকেটের ২৫৫টিই এসেছে ওয়ানডে ক্রিকেটে। এই সংস্করণে ২০০ উইকেট নেই আর কারও।
১৯১ উইকেট নিয়ে দুইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার শাবনিম ইসমাইল।
পেস বোলিংয়ে রাজত্ব
এই উপমহাদেশের একজন নারী পেসারের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাস্তবতা কতটা কঠিন, সেটি বোঝা যায় ঝুলনের ক্যারিয়ার থেকে। পাশাপাশি ফুটে ওঠে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশালত্বও।
তার আন্তর্জাতিক উইকেট ৩৫৫টি। এশিয়ার আর কোনো পেস বোলারের নেই ১২০ উইকেটও!
১১৯ উইকেট নিয়ে দুইয়ে আছেন ভারতেরই শিখা পান্ডে। তার ক্যারিয়ারও এখন শেষ পর্যায়ে, জাতীয় দলে জায়গা হারিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী পেসার। ১১৪ উইকেট নিয়ে ৫ বছর আগে অবসরে গেছেন পাকিস্তানি পেসার আসমাভিয়া ইকবাল।
দুই দশকের পথচলা
২০ বছর ২৬১ দিনের ওয়ানডে ক্যারিয়ার ঝুলনের। তার চেয়ে দীর্ঘ ওয়ানডে ক্যারিয়ার আছে তার কেবল একজনের। ভারতীয় ক্রিকেটের আরেক কিংবদন্তি মিতালি রাজ কিছুদিন আগে অবসরে গেছেন ২২ বছর ২৭৪ দিনের ক্যারিয়ার শেষে।
ডাবল সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয়
নারী ওয়ানডেতে দুইশ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে কেবল মিতালি ও ঝুলনের। ২৩২ ম্যাচ খেলে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন মিতালি, ২০৩ ম্যাচে থামলেন ঝুলন।
লাল-সাদায় রাজত্ব
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই ইনিংসে ৫ উইকেট শিকারী প্রথম বোলার ছিলেন ঝুলন।
টেস্টে প্রথম ৫ উইকেটের স্বাদ পান তিনি ২০০৫ সালের নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ইংলিশদের বিপক্ষেই কদিন পর ৫ উইকেট নেন তিনি ওয়ানডেতে। টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নেন ২০১২ সালে, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
ঝুলনের পর তিন সংস্করণেই ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়তে পেরেছেন আর কেবল একজন, ইংল্যান্ডের জেরি গান।
বিশ্বমঞ্চের সেরা
৪৩ উইকেট নিয়ে মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের সফলতম পেসার ঝুলন। মজার ব্যাপার হলো, তার সবকটি উইকেট আলাদা ব্যাটারের!
৩৯ উইকেট নিয়ে দুইয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক বাঁহাতি স্পিনার লিন ফুলস্টন।
বয়সকে বশ
৩৯ বছর ৩০৩ দিন বয়সে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেললেন ঝুলন। তার চেয়ে বেশি বয়সে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি ভারতের আর কেউ।
মিতালি রাজ তার শেষ ম্যাচটি খেলেছেন ৩৯ বছর ১১৪ দিন বয়সে।
টেস্ট ম্যাচে ও ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ভারতের হয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সে খেলার রেকর্ড ঝুলনের।
টি-টোয়েন্টির সেরা
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে ভারতের হয়ে সেরা বোলিংয়ের কীর্তি ঝুলনের। ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিনি ৫ উইকেট নেন ১১ রানে।
ওয়ানডেতে এক ম্যাচে ৬ উইকেটের স্বাদ পাওয়া ভারতের তিন বোলারের একজন তিনি।