শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

পাকিস্তানে পানিবাহিত রোগে মারা যাচ্ছে অসংখ্য শিশু

প্রতিনিধির / ১৬৬ বার
আপডেট : সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
পাকিস্তানে পানিবাহিত রোগে মারা যাচ্ছে অসংখ্য শিশু
পাকিস্তানে পানিবাহিত রোগে মারা যাচ্ছে অসংখ্য শিশু

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের একটি হাসপাতালের চিত্র। প্রায় অচেতন একটি শিশু শুয়ে আছে বিছানায়, পানিশুন্য-নিস্তেজ দেহ বেঁচে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তার পাশেই সাদা কাপড়ে মোড়ানো নিথর দেহের আরেকটি শিশুকে রাখা হয়েছে, কয়েক মিনিট আগে মারা গেছে শিশুটি। এর ঘণ্টাখানেক পর অসুস্থ আরেকটি শিশু মারা যায়। কান্নাভেজা দৃষ্টিতে শিশুটির দাদি দেখছিলেন চিকিৎসকরা তাকেও সাদা কাপড়ে ঢেকে রাখছেন।

এই শিশুরা মারা গেছে কলেরায়। ব্যাকটেরিয়াযুক্ত বিষাক্ত পানি পান করার কারণে ডায়রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে একে একে মারা যাচ্ছে এই শিশুরা। তবে, এই চিত্র মাত্র একটি জায়গার।

পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন ১০ জনের বেশি শিশু মারা যাচ্ছে। এই হিসাব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসকদের দেওয়া বর্ণনা থেকে পাওয়া। দেশটিতে এই গ্রীষ্মের প্রলয়ঙ্কারী বন্যায় এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল পানির নিচে ডুবে যাওয়ার পরে এখন পানিবাহিত রোগে চরম পরিণতির শিকার হচ্ছে শিশুরা। খবর সিএনএনের।

সিন্ধু প্রদেশের ওই হাসপাতালের জরুরি সেবা কক্ষে আরও কয়েক ডজন শিশুকে এক সঙ্গে শুইয়ে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে কেউ অচেতন, কেউ ব্যথায় কাঁদছে। জীর্ণশীর্ণ পাঁজর আর ফ্যাকাসে চোখের এই শিশুরা ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। পাশের একটি কক্ষে উৎকন্ঠায় নীরবে অপেক্ষা করছে শিশুদের বাবা-মায়েরা। তারা জানেন না সন্তানকে জীবিত ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন কিনা।

হাসপাতালটির জরুরি শিশু বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক নাজিয়া উরুজ বলেন, ‘বন্যা ও বৃষ্টির পর আমাদের হাসপাতালে বন্যার মতোই রোগী আসতে শুরু করেছে।’

এটা সারা পাকিস্তানে বাড়তে থাকা নজীরবিহীন স্বাস্থ্য সংকটের একটি খন্ড চিত্র মাত্র, এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে কোনো সাহায্যই পৌঁছেনি। সাহায্য সংস্থাগুলো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে আন্তার্জাতিক সম্প্রদায় যদি কাজ শুরু না করে তবে পরিস্থিতি কেবল খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকেই যাবে।

রেকর্ড মৌসুমি বৃষ্টিপাত আর পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়ি এলাকার হিমবাহ গলে সৃষ্টি হওয়া এবারের বন্যায় প্রায় ১৬০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন যার এক-তৃতীয়াংশই শিশু। বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩ কোটি ৩০ লাখ মানুষ।

সিন্ধু প্রদেশ হলো এবারের বন্যার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের একটি। কোনো কোনো গ্রাম একেবারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে এমন অবস্থায় পৌঁছেছিল যে অসুস্থ শিশুদের সাহায্যের জন্য পরিবারের লোকজন কোথাও যেতে পারেননি।

এ প্রসঙ্গে পাকিস্তানে ইউনিসেফের কমিউনিকেশন কর্মকর্তা আদর্শ লেঘারি বলেন, ‘অনেক শিশুকে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়নি কেননা সেগুলোও ছিল পানির নীচে অথবা বন্ধ’।

এদিকে বন্যার পানি ধীরে ধীরে নেমে যাবার পর নতুন দুর্যোগ হয়ে দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া জ্বর। আর এই সঙ্কটে পড়ছেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণির মানুষ বা সবচেয়ে গরীবরা। সিন্ধু প্রদেশে ডেঙ্গুজ্বর সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করেছে। এডিস মশার কারণে ছড়তে থাকা এই রোগ জিকা, চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভারেরও সংক্রমণ ঘটাচ্ছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘ এক বিবৃতিতে পরিস্থিতিকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। এতে বলা হয়, লাখ লাখ শিশু বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে এদের মধ্যে কয়েক হাজার হয়তো লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ