শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:০৫ অপরাহ্ন

দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেড় বছর ধরে বন্ধ

প্রতিনিধির / ১৮৬ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২
দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেড় বছর ধরে বন্ধ
দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেড় বছর ধরে বন্ধ

বৈশ্বিক সংকটের কারণ দেখিয়ে দেশে বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় সরকার জ্বালানি খরচ মেটাতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ। ব্যয়বহুল তেল ও গ্যাস নির্ভর কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন কম খরচে ভিন্ন প্রযুক্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দাবি উঠেছে সর্বত্র।

ফেনীর সোনাগাজীতে জনবল সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দেড় বছর ধরে বন্ধ থাকলেও তা সচল করার উদ্যোগ নেই সরকারের। ০.৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি দ্রুত চালু করার জোরালো দাবি তুলেছে এলাকাবাসী।

কোন প্রকার রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া নদী উপকূলে সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্টে দাঁড়িয়ে আছে চারটি পাখা। চারপাশ গো-চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। সংরক্ষিত এ এলাকায় রাতে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা।

এর আগে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ব্যবহৃত হলেও এখন এই কেন্দ্রটি নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নেই কোনো মাথা ব্যথা। ঠুনকো অজুহাত তুলে হাত গুটিয়ে বসে আছেন সংশ্লিষ্ট দুটি কর্তৃপক্ষ। দেশে বিদ্যুতের এই সংকট মুহূর্তেও বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সচল করার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না কেউ।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় থাক খোয়াজের লামছি মৌজায় দেশের প্রথম বায়ুশক্তি চালিত বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মিত হয়। সাড়ে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দিনে ৯০০ কিলোওয়াট (০.৯ মেগাওয়াট)। প্রকল্পটি নির্মাণ করে ভারতের নেবুলা টেকনো সল্যুশন কোম্পানি লিমিটেড।

নির্মাণের কয়েক মাস পরেই যান্ত্রিক ত্রুটিসহ নানা অজুহাতে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এই পাইলট প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্যানএশিয়া পাওয়ার সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে উৎপাদনের জন্য চুক্তি করে ওই বছর প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়। প্রায় ছয় বছর উৎপাদন কার্যক্রমও চলেছিল।

মিটারের তথ্য মতে, শুরু থেকে সর্বশেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পে উৎপাদিত আট লাখ ৮৮ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হয়েছে। দীর্ঘ দেড় বছর যাবত বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো যেন মাথাব্যথা নেই।

২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি সংগঠন ও পদ্ধতি পরিদপ্তর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সাতটি পদের অনুকূলে সাতজন লোককে কাগজে-কলমে পদায়ণ করলেও বাস্তবে কেউ যোগ দেয়নি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা বললেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাতাসের (বায়ুর) যে পরিমাণ গতিবেগ থাকার কথা সে পরিমাণ গতিবেগ না থাকায় কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। এটি চালুর ব্যাপারে কোনো সমীক্ষা বা উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ফেনী জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ছানা উল্যাহ বলেন, তিনি এক মাস পূর্বে ফেনীতে যোগদান করেছেন। তাই প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে তার তেমন কোনো ধারণা নেই। তবে শুনেছেন বায়ুর গতিবেগ কম থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদন দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে।

সচল করার কোনো উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পটি সচল হওয়া জরুরি। তবে এখনো কোনো প্রকার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম সনৎ কুমার ঘোষ বলেন, বায়ুর গতি বেগ কম থাকায় এবং উৎপাদনের শুরুতেই পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে চালু করতে হয়। উৎপাদিত বিদ্যুৎ এবং পল্লী বিদ্যুতের ব্যবহৃত বিদ্যুতের খরচ প্রায় অর্ধেক। প্রকল্পটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে রয়েছে। শুধুমাত্র উৎপাদিত বিদ্যুৎ পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে ব্যবহৃত হতো। তবে পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দিয়ে এবং প্রকল্পটি মেরামত করে সচল করলে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে সহায়ক হবে।

সোনাগাজী পৌরসভার মেয়র উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, প্রকল্পটি চালু করা হলে সোনাগাজীতে চলমান এ সংকটের মধ্যে ঘাটতি মেটাতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তাই তিনি দ্রুত সমীক্ষা করে প্রকল্পটি পুনরায় চালু করার দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজী মো. আবু সুফিয়ান বলেন, বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারকে আগ্রহী থাকতে হবে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি অযত্ন-অবহেলায় ভেস্তে যেতে পারে না। দ্রুত প্রকল্পটি চালু করার দাবি জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ