দেশে গত আট মাসে বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে দুই হাজারেরও বেশি কন্যাশিশু। ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৭৪ শিশু। এ সময়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে ৭৬ জন । এসব হয়রানি অধিকাংশই হয়েছে রাস্তা ও বাসায়।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত কন্যাশিশুদের নিয়ে জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ প্রতিবেদনে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত তথ্য দেয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের প্রথম আট মাসে ২৮ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দুই হাজার ৪৭৪ কন্যাশিশুর বাল্যবিয়ে হয়েছে। যা গড়ে প্রতিমাসে দাঁড়ায় ৩০৯ জন। যদিও এসময় প্রশাসনের সহায়তায় তাৎক্ষণিকভাবে ৫8৯টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে।
আরও জানানো হয়, এসময়ে মোট ৭৬ কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে আবার একজন বিশেষ শিশুও রয়েছে। এ নির্যাতনগুলোর অধিকাংশই হয়েছে রাস্তা, নিজের বাসা, নিকটতম আত্মীয় ও গৃহকর্তার দ্বারা।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম বলছে, ২০২২ সালের প্রথম এ আট মাসে মোট ৫৭৪ কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এরমধ্যে একক ধর্ষণের শিকার ৩৬৪ জন, দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ৮৪ জন। ধর্ষণের শিকারের মধ্যে প্রতিবন্ধী ৪৩ কন্যাশিশুও রয়েছে। এছাড়া প্রেমের অভিনয় ও বিয়ের প্রলোভনে ৪৯ কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২০ জনকে। এছাড়া ৮৭ শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে।
এতে জানা যায়, গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ৮ মাসে ১৮৬ কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে, পারিবারিক সহিংসতা, দ্বন্দ্ব, আগে থেকে পারিবারিক শত্রুতার জের, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের প্রমাণ গোপনের জন্য।
প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সংস্থাটি ২৪টি জাতীয়, স্থানীয় এবং অনলাইন পত্রিকার সহায়তা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এছাড়া বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত কিছু তথ্য নেয়া হয়েছে মাঠপর্যায় থেকে। ১৩ ক্যাটাগরির আওতায় ৫৬টি সাব-ক্যাটাগরিতে এসব তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা হয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, কন্যাশিশু ও নারী নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ জানানোর ক্ষেত্রে পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে নানা ধরনের ভুল ধারণা, শঙ্কা ও কুসংস্কার রয়েছে। এরমধ্যে আবার নির্যাতিত শিশু বা তার পরিবার বিচার চাইতে গেলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যদি সব বাঁধা উপেক্ষা করে তারা আইনি ব্যবস্থা নিতেও যান, সেখানে আবার দেখা গেছে উল্টো চিত্র। অভিযুক্তদের আটক করা, তাদের শাস্তি দেয়া তথা ন্যায়বিচার পাওয়ার ঘটনা অনেক কম। কখনো তো বিচারই পান না ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিচারহীনতার সংস্কৃতির জন্য অপরাধী নির্ভয়ে অন্যায় করতে উৎসাহিত হচ্ছে। ফলে নির্যাতন ও সহিংসতা বেড়েই চলেছে।