মানিকগঞ্জ: জেলা শহরে প্রবেশ করার অন্যতম দ্বার আন্ধারমানিক-বেওথা সড়ক। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দক পুরো সড়কে। আর এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে শতশত ছোট বড় যানবাহন। এ পরিস্থিতিতে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনা। সম্প্রতি রাস্তাটি মেরামতে ৩৭ লাখ টাকার ব্যয় করে পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে এতে কোনো দুর্ভোগ কমেনি বলে অভিযোগ এই রোডে যাতায়াতকারী মানুষের। হাটু
সরেজমিনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জের কয়েকটি সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কানিজ ফাতেমা স্কুল, আকিজ ফাউন্ডেশন স্কুল, মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ, মানিকগঞ্জ সরাকারি মহিলা কলেজসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ দিয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়া আসা করে আসছে।
শুধু তাই নয়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে জেলার ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলার হাজারও মানুষ নিরপদে জেলা শহরের আসা যাওয়া করে থাকে এই পথ ধরেই। এছাড়াও এই পথ ধরে অল্প সময়ে সিংগাইর-হেমায়েতপুর হয়ে রাজধানী ঢাকায় আসা-যাওয়া করছে শতশত মানুষ। সাধারণ মানুষের কাছে সড়কটির গুরুত্ব থাকলেও পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় সড়কটি স্থায়ী সংস্কারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সড়কটি ক্ষতবিক্ষত হওয়ার পেছনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বড় বড় দুরপাল্লার বাস কোচ এবং পণ্যবাহী ভারি ওজনের ট্রাক ও লড়ির চলাচল করাকেই দায়ী করছে স্থানীয়রা। সম্প্রতি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তার মেরামতের কাজ করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। সঠিকভাবে কাজ না করায় পৌর কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের চূড়ান্ত বিল আটকে দিয়েছে বলে জানা গেছে।
আন্ধারমানিক-বেওথা সকড় দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষজন ও যানবাহন চালকদের সঙ্গে কথা হলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা। সিএনজি চালক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আন্ধারনমানিক-বেওথা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন জেলা শহর থেকে যাত্রী নিয়ে হরিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করি। কিন্তু রাস্তাটির বিভিন্ন জায়গায় বড়বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। মাঝেমধ্যে গর্তে গাড়ির চাকা পড়ে উল্টে যায়। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটির এই বেহাল দশা দেখে আসছি। কিন্তু স্থায়ীভাবে মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই।’
এলাকার বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মহাসড়কের বড় বড় গাড়িগুলো এই রুট ব্যবহার করায় রাস্তাটি টেকশই হচ্ছে না। আসলে এই রাস্তাটিকে বাইপাস হাইওয়ে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বড় গাড়িগুলো এই রুটে যাতায়াত বন্ধ না করা গেলে রাস্তাটি আরও বেশি ভেঙে যাবে।’
ঝিটকা এলাকার বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, সম্প্রতি ৩৭ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তায় দায়সারা কাজ করা হলেও সেগুলো পানিতে পড়েছে। কোনো কাজেই আসেনি ৩৭ লাখ টাকা। সামান্য এক কিলোমিটার রাস্তাটি স্থায়ীভাবে নির্মাণ না করায় চারটি উপজেলার মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই।
কানিজ ফাতেমা স্কুলের চালক স্বপন জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি আর সড়ক থাকে না। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পানির নিচে বড় বড় গর্ত হয়ে উঠে ঝুঁকিপূর্ণ। তখন শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। বৃষ্টির সময় পানির নিচে গর্তগুলো দেখা না যাওয়ায় আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে সড়কটি। অনেক সময় শিক্ষার্থী নিয়ে বাস উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। সড়কটি দ্রুত মেরামত করা হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
কানিজ ফাতেমা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, স্কুল বাস করে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ভাঙা সড়ক দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয় তাদের। এছাড়া সামান্য একটু বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানিতে ভরপুর থাকে। জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত হয়। গর্তে বাসের চাকা পড়লে তাদের মনে হয় এই বুঝি বাসটি উল্টে পড়ে গেল। তাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারের দাবি শিক্ষার্থীদের।
কানিজ ফাতেমা স্কুলের শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বেওথা-আন্ধারমিক সড়ক দিয়ে আমাদের স্কুলের ৭টি বাস চলাচল করে। প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী এই সড়ক দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করে থাকে। রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থী বহনকারী বাসচলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। রাস্তারটির এমনই বেহাল দশা স্কুলের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই ইট, সুরকি ফেলে কোনো রকমের চলাচলের উপযোগী করতে হয়। কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আগে রাস্তাটি মেরামতের জন্য পৌরক র্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
মুন্নু স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘মানিকগঞ্জ শহর ও তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের নিজস্ব বাসে অসংখ্য শিক্ষার্থী বেওথা-আন্ধারমানিক সড়ক দিয়ে প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া করে আসছিল। কিন্ত রাস্তার অবস্থা বেশ কিছুদিন ধরেই এতোই নাজুক হয়েছে যে, এখন আর এই রাস্তাটি ব্যবহার করা হচ্ছে না। অথচ রাস্তাটি ছিল আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। বর্তমানে বাধ্য হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক ব্যবহার করা হচ্ছে। যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তাটি সংস্কারের ব্যাপারে এরমধ্যেই পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। মেরামত হলে আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা আবার এই পথে স্কুলে আসা যাওয়া করবে।‘
মানিকগঞ্জ পৌর সভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জগৎবন্ধু মণ্ডল বলেন, ‘রাস্তাটি স্থায়ী সংস্কার করতে গেলে আরসিসিসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য বড় প্রকল্প ছাড়া অল্প বাজেটে কাজ সম্ভব নয়। সম্প্রতি রাস্তাটি কিছু অংশ সংস্কারের কাজ করা হলেও ঠিকাদার দরপত্র অনুযায়ী কাজ না করায় চূড়ান্ত বিল তাকে দেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. রমজান আলী বলেন, ‘রাস্তাটির অবস্থা একেবারেই নাজুক। কিভাবে স্থায়ীভাবে রাস্তার কাজ করা যায় সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে ছোট বাজেটে এতো বড় কাজ সম্ভম নয়। পরিকল্পনা করেই রাস্তাটির কাজ হাতে নিতে হবে।’