চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটাই অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মন্দার শঙ্কা ও স্টক মার্কেটের পতনের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এসব কারণে বিশ্বের বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেটার শেয়ার ৫৮ শতাংশ কমেছে। গুগল ফাইন্যান্সের তথ্যানুযায়ী, অ্যামাজন ও গুগলের বাজার শেয়ারও ৩০ শতাংশ কমেছে। শেয়ারে পতন হওয়ায় অনেক ধনকুবের লোকসানের মুখে পড়েছে। যাদের মধ্যে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলোর প্রধান নির্বাহীরাও রয়েছেন। খবর টেকটাইমস।
ভক্স এ বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তথ্যানুযায়ী, ফোর্বসের শীর্ষ ৪০০ আমেরিকান ধনীদের মধ্যে থাকা প্রযুক্তি খাতসংশ্লিষ্টরা সামগ্রিকভাবে ৩১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার লোকসান গুনেছে। তবে ভক্স জানায়, অর্থনৈতিক দৈন্যদশার মধ্যে থাকলেও প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো বর্তমানে ভালো অবস্থানে রয়েছে। অধিকাংশ বিলিয়নেয়ারদের কাছে কভিড-১৯ মহামারীর আগের সময়ের তুলনায় আরো বেশি অর্থ রয়েছে।
ফোর্বসের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের অর্থের পরিমাণ ১৫ হাজার ১০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। এর আগে তিনি ৫ হাজার কোটি ডলার লোকসান করেছেন। সে হিসাবে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বর্তমানে ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার বেশি রয়েছে। ২০১৯ সালে যেখানে এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৫০০ কোটি।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার লোকসান গুনলেও তার কাছে এখনো ১০ হাজার ৬০০ কোটি ডলার রয়েছে। কভিড-১৯ মহামারীর আগের সময়ের তুলনায় তিনি আরো সম্পদের মালিক হয়েছেন। যেখানে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা সার্জে ব্রিন ২০১৯ সালের হিসাবে এখনো ৩ হাজার ৫৫০ কোটি ডলারের মালিক।
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলোন মাস্ক ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী অটোমোটিভ তালিকার অন্তর্গত। অন্যদিকে মেটার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গকে মিডিয়া অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট বিভাগে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাজারে দুরবস্থা চললেও ফোর্বসের তালিকায় থাকা ৬৫ জন টেক বিলিয়নেয়ারের মধ্যে ৫৬ জনই ২০১৯ সালের তুলনায় আরো বেশি সম্পদশালী হয়েছে। এদের মধ্যে মাইক্রোসফটের বর্তমান সিইও স্টিভ বলমার, গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ ও সার্জে ব্রিন, টুইটারের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি ও ওরাকলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসন রয়েছেন। ২০২১ সালে ৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার লোকসানের পরও জাকারবার্গ বর্তমানে কভিড-১৯ মহামারী-পরবর্তী অর্জনের মধ্যে রয়েছেন। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৫ হাজার ৭৭০ কোটি ডলার, যা ২০১৯ সালের ৬ হাজার ৯৬০ কোটি ডলারের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম। ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ডাস্টিন মস্কোভিটজের সম্পদও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১৯ সালে ১ হাজার ১৬০ কোটি ডলার থাকলেও ২০২২ সালে তা ৮১০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
অন্যদিকে ভার্চুয়াল সম্মেলনের হার কমে যাওয়ায় ও অফিসে কর্মীরা ফেরত আসতে শুরু করায় জুমের প্রতিষ্ঠাতা এরিক ইউয়ানও বড় ধরনের আর্থিক লোকসানের মুখে পড়েছেন। ২০২০ সালের অক্টোবরে জুমের প্রতি শেয়ারের মূল্য ছিল ৫৮৮ দশমিক ৮৪ ডলার। বর্তমানে যার হার ৭৫ ডলার। তবে ভক্সের মতে, এটি দীর্ঘমেয়াদি কোনো ক্ষতি নয়। প্রযুক্তি খাতের অধিকাংশ ধনকুবের তিন বছরে তাদের সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়েছে। ইলোন মাস্ক এদিক থেকে সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। ২০২০ সালে কভিড-১৯-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ ও লকডাউন থাকা সত্ত্বেও তার মোট সম্পদের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ২৪২ শতাংশ বেড়েছে।