শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:১৫ অপরাহ্ন

প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমছে, বাড়ছে এলএনজি আমদানি

প্রতিনিধির / ১৭১ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২
প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমছে, বাড়ছে এলএনজি আমদানি
প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমছে, বাড়ছে এলএনজি আমদানি

বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্রমেই আমদানি করা তরল জ্বালানি নির্ভর হয়ে পড়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতা কমছে। বাড়ছে এলএনজি আমদানি।

সূত্র জানায়, গত ১০ বছরে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার ছিল প্রায় ৮৯ শতাংশ। সেটি গত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে কমে ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর কারণ দেশে নতুন করে কূপ খনন করা হচ্ছে না। আর বিদ্যমান গ্যাস ক্ষেত্র থেকেও চাহিদা মাফিক গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এসব কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন আমদানি করা ব্যয়বহুল তরল জ্বালানি নির্ভর হয়ে পড়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯-২০১০ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রে তরল জ্বালানির ব্যবহার ছিল ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ব্যবহার বেড়ে দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ব্যবহার কিছুটা কমে ১৯ দশমিক ০৭ শতাংশে দাঁড়ায়।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত বিদ্যুৎ বিভাগের ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে’ (এপিএ) বলা হয়েছে, মানসম্মত, নিরবচ্ছিন্ন ও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ এ খাতের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। এর কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে-বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতা অনস্বীকার্য। নিজস্ব সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে যথোপযোগী প্রাথমিক জ্বালানি নির্ধারণ বিদ্যুৎ খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি নির্ভর জ্বালানি মূল্যের অস্থিরতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে।

সূত্র জানায়, তরল জ্বালানির শতভাগ বিদেশ থেকে আমদানির কারণে প্রতি বছর এ খাতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এ অবস্থায় জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস/এলএনজি ও কয়লাকে প্রধান জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে এলএনজি ও কয়লা আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণও একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগের মনে করে, অভ্যন্তরীণ সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বর্ধিত চাহিদার সাথে ভারসাম্য রক্ষা করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা কঠিন কাজ। বর্তমানে দেশে চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণে এ খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন।

বিদ্যুৎ বিভাগের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সাল ও ২০৪১ সাল নাগাদ দেশে যথাক্রমে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিদ্যুৎ খাতে ২০৪১ সালের মধ্যে আট হাজার ৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত মার্চে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়। এর মধ্যে ক্যাপটিভ পাওয়ার থেকে দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াট এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৩৫৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের ১০০ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। মাথাপিছু বিদ্যুতের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫৬০ কিলোওয়াট/ঘণ্টা।

এপিএ’র আওতায় চলতি অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিভাগ যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-বাগেরহাটের রামপালে মৈত্রী বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু; মাথাপিছু বিদ্যুতের উৎপাদন ৫৭০ কিলোওয়াট/ঘণ্টায় উন্নীতকরণ; ১০ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন নির্মাণ/আধুনিকায়ন; ৬৫০ সার্কিট কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ, ৩ লাখ নতুন প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন ইত্যাদি।

বিদ্যুৎ আশা করছে এই কাজগুলো ঠিক সময়ে সম্পন্ন করা গেলে বিদ্যমান সমস্যার অনেকটা সমাধান হবে। পাশাপাশি সরকার অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী দেশ গড়ার যে রূপকল্প তৈরি করেছে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ