জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে স্থান পেতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে মর্যাদাপূর্ণ মানবাধিকার পর্ষদের সদস্য পদ পেতে চায় ঢাকা। এবার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে বাংলাদেশের বিপক্ষে। তাই সহজ হবে না এ নির্বাচনে বাংলাদেশের জয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ১১ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মানবাধিকার পরিষদের ১৪টি শূন্য আসন পূরণের জন্য গোপন ব্যালটে ভোট হবে। এবার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের চারটি আসনের বিপরীতে বাংলাদেশসহ ৭টি দেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো হলো- দক্ষিণ কোরিয়া, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, কিরগিজস্তান ও বাহরাইন। এর মধ্যে মালদ্বীপ সবচেয়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব শেষ করেছেন মালদ্বীপের রাজনীতিবিদ আবদুল্লাহ শহিদ। ফলে তাঁর সঙ্গে ভোটের প্রচারে পেরে ওঠা কঠিন বলে মনে করছে ঢাকা।
এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও বাহরাইনকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ তিনটি দেশের কূটনৈতিক তৎপরতা বেশ শক্তিশালী। এ ছাড়া আফ্রিকার দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক দুর্বল। আফ্রিকার একটি ভোট যে দিকে যায়, বাকি ৫৩টি ভোটও সে দিকে যায়। বাংলাদেশের মূল প্রতিদ্বন্দ্বীদের আফ্রিকায় ভালো প্রভাব রয়েছে। ফলে দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও বাহরাইনের মধ্যে একটি দেশকে হারিয়ে পরিষদে যায়গা করে নেওয়া সহজ হবে না বাংলাদেশের জন্য।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্ষদের ভোট পেতে প্রচারে গিয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল। এখন শেষ মুহূর্তের প্রচার চলছে। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ইস্যুতে র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। গত আগস্টে সফরে এসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দিয়ে গেছেন। এ ছাড়া সামনে জাতীয় নির্বাচন। সব মিলিয়ে মানবাধিকার পরিষদের পদটি ঢাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে ২০১৮ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য পদে নির্বাচন করেছিল বাংলাদেশ। সে সময় ১৭৭টি ভোট পেয়ে বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল।
সূত্র জানায়, আফগানিস্তানকে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে না বাংলাদেশ। কারণ তালেবান আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতায় আসার পর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলো। শুধু নিয়মিত কাজ চালানোর জন্য তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তানকে স্থান করে দিয়েছে জাতিসংঘ। তাই তারা ভোট টানতে পারবে না। আর শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা তুলেও নিতে পারে তারা। কিরগিজস্তানকেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখছে না ঢাকা।
বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলো ভোট চাইছে অনেক আগে থেকেই। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জানান, ভোটে বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ। অভ্যন্তরীণ মানবাধিকার নিয়ে দেশে ও বিদেশে সমালোচনা থাকলেও অতীতে মানবাধিকার কাউন্সিলের নির্বাচনে বাংলাদেশ ভালো করেছে। মানবাধিকার ইস্যুটি নির্বাচনে বাধার কারণে হলে মিয়ানমার, চীন, রাশিয়া বা ভেনেজুয়েলার মতো দেশ এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারত না।
মানবাধিকার পর্ষদের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রস্তুতির কথা জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশ বেশ সোচ্চার। পৃথিবীর বহু দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানবাধিকার অনেক সমুন্নত। আমরা সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও মানবাধিকারের জন্য সংগ্রাম করে থাকি। আমরা বহু বছর ধরে মানবাধিকার পরিষদের সদস্য। আমার বিশ্বাস, এবারও বাংলাদেশ জয় পাবে। নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে প্রস্তুতি বেশ ভালো বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের মোট সদস্যপদ ৪৭। বছরের শেষের দিকে সংগঠনের এক-তৃতীয়াংশ আসনে ভোট হয়। সর্বোচ্চ ১৮ আসনে নির্বাচনের মাধ্যমে পাঁচটি আঞ্চলিক গ্রুপ থেকে এ পরিষদে সদস্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে একটি দেশ পরপর দুইবার টানা ৬ বছর সদস্য হয়ে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কাউন্সিলে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা ৬ বছর সদস্য হিসেবে কাজ করেছে। নিয়ম অনুযায়ী ২০২২ সাল ছাড় দিয়ে ২০২৩-২৫ এই ৩ বছরের মেয়াদে সদস্যপদ পেতে চাইছে ঢাকা। এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রাষ্ট্রকে অবশ্যই জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের উপস্থিত ভোটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে।