কুমিল্লার মেধাবী শিক্ষার্থী মীর শাহরিয়ার আলমের স্বপ্ন দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদান রাখা। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী যেখানে পুথিগত বিদ্যা অর্জনে ব্যস্ত, সেখানে শাহরিয়ার কাজ করছেন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের। যেই বাংলাদেশ ড্রোন আমদানি নয়, রপ্তানি করবে; যেই বাংলাদেশ রোবট সোফিয়ার চেয়েও উন্নত রোবট তৈরি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেবে। আর এই স্বপ্ন নিয়েই তিনি তৈরি করে ফেলেছেন ৫টি উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন। বর্তমানে তিনি উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার কাজে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। এর আগে তিনি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
শাহরিয়ারের জন্ম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কোমারডোগা গ্রামের মীর পরিবারে। তার বাবা মীর শাহ আলম একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং মা গাজী নীলিমা ইয়াছমিন গৃহিণী। তার পরিবার কুমিল্লা শহরের রানীরদীঘির পাড়ে বসবাস করছে।
উচ্চপ্রযুক্তির ড্রোন তৈরি নিয়ে কথা হয় শাহরিয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ ধরনের ড্রোন তৈরির শুরুর গল্পটা একটু অন্যরকম। এ আকাশযানের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় ২০১০ সালে যখন তিনি কুমিল্লা জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। সেই সময় বইয়ে আকাশজয়ের কাহিনি পড়ে তারও ইচ্ছা হলো একদিন তিনি নিজের তৈরি ড্রোন উড়াবেন এবং উন্নত রোবট বানাবেন। নিজে গবেষণা করে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তৈরি করে ফেলেন ৫টি ড্রোন। এগুলোর এয়ারফ্রেম তৈরি হয়েছে নিজস্ব প্রযুক্তির কর্কশিট, অ্যালুমিনিয়াম পাইপ ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে। সেন্সর হিসাবে ব্যবহার করেছেন এক্সিলেরোমিটার, গাইরোস্কোপ, ব্যারোমিটার ও জিপিএস সিস্টেম, যা স্থানীয় বাজার থেকে সংগৃহীত। আর হার্ডওয়্যার পরিচালনায় ব্যবহার করেছেন নিজের তৈরি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সফটওয়্যার। এ ড্রোনগুলো দিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, বন্যাকবলিত বা দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ওষুধ ও ত্রাণ সরবরাহ, ভালো রেজুলেশনের ছবি, ভিডিও সংগ্রহ ও সরাসরি কোনো বিষয় সম্প্রচার করা সম্ভব। এমনকি এই ড্রোন দিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা ও নিরাপত্তা বাহিনীর হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তা ও বিশৃঙ্খলা রোধে ট্র্যাকিংয়ের কাজও সম্ভব। একেকটি ড্রোন তৈরিতে তার খরচ পড়েছে মাত্র ২৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। অথচ বিদেশ থেকে কিনতে গেলে এসব ড্রোনের দাম পড়বে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা।