পাহাড়ের মাটিতে উৎপাদিত জুমের পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে জুমিয়াদের। কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমের ফলন ভালো হয়নি বলে জানিয়েছেন জুমচাষিরা। এতে আগামীতে খাদ্য সংকটের আশংকা করছেন তারা।
পাহাড়ের ঢালে জঙ্গল কেটে ও আগুনে পুড়িয়ে পরিষ্কার করে মাটিতে ধানসহ নানা জাতের সবজি ও অর্থকরী ফসল একত্রে চাষাবাদকে স্থানীয় ভাষায় জুম চাষ বলা হয়। সাধারণত পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢাল পরিষ্কার করে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে মাটি উপযুক্ত করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুঁচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধানসহ নানা সবজির বীজ বপন করা হয়। শ্রাবণ-ভাদ্র-আশ্বিন মাসে জুমের ধান কাটা হয়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর রাঙামাটির ১০ উপজেলায় ৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে জুম ধানের আবাদ হয়েছে। এ বছর জুম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে গড়ে ১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন জুম ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমের ফসল কিছুটা কম হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জুম ধানের মধ্যে রয়েছে গেলং, কবরক, রাঙ্গী, শুরি, মধুমালতী, কামারাং, বিনি ধান ইত্যাদি। এ ছাড়া অর্থকরী ফসল হচ্ছে মারফা, মরিচ, বেগুন, তিল, ঢেঁড়স ইত্যাদি।
জুম চাষিরা জানিয়েছে, এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জুমে ভালো ফলন হয়নি। এ ফসলে আগামী কয়েক মাস তাদের চলবে বলে মনে করছেন জুমিয়ারা। এতে করে চাষিরা খাদ্য সংকটের আশংকা করছেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বরাদম এলাকার জুমচাষি ধনমণি চাকমা বলেন, ‘এ বছর জুমের ধান ভালো ফলন হয়নি। এ ফসল দিয়ে আগামী কয়েক মাসের খোরাক হবে কি-না তা নিয়ে চিন্তায় আছি।’
আরেক জুমচাষি মিশু চাকমা বলেন, ‘বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ফসল নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। কীভাবে চলবো আগামী মাসগুলো তা জানি না।’
রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা বলেন, প্রাকৃতিকভাবে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার ফলে এ বছর জুমচাষিদের জুমের ফলন ভালো হয়নি। এতে করে আগামী দিনগুলোতে খাদ্য সংকটের আশংকা রয়েছে।
রাঙামাটি সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু মো. মনিরুজ্জামান বলেন, জুমচাষ হচ্ছে পুরোপুরি মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল ফসল। রাঙামাটি সদর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে জুমের আবাদ হয়েছে। পাহাড়ি জমিতে যদি জুম চাষ করা হয়, তাহলে তিন/চার বছর ওই জমি অনাবাদী রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের অনাবাদী জমিতে চাষ করার জন্য কৃষকদের আমরা কাজু বাদাম দিচ্ছি। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, জুমচাষের পাশপাশি অন্যান্য ফসল ফলানোর জন্য; যাতে করে তাদের পারিবারিক খাদ্যের চাহিদা মেটে।’
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, রাঙামাটিতে কয়েকটা এলাকায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধারণা করা হচ্ছে, জুমের ফলন কিছুটা কম হতে পারে। তবে জুমে অন্যান্য যে ফসলগুলো আছে, যেমন- তিল, মারফা, পেঁপে, আদা, হলুদ, মরিচ, সবজি, কলার ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশা করছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন ও জুম চাষিদের ব্যাংক থেকে ঋণের সুবিধা দিলে জুমে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, এ অঞ্চলের খাদ্যের ঘাটতি পূরণ হবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।