চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে স্যামসাং ইলেকট্রনিকসের পরিচালন মুনাফা প্রায় ৩২ শতাংশেরও বেশি কমেছে। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় সেমিকন্ডাক্টর, স্মার্টফোন ও গৃহস্থালি পণ্যের বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাসে আয় কমেছে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটির।
গতকাল স্যামসাং এক প্রাক্কলনে জানায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তাদের ১০ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ওন বা ৭৭০ কোটি ডলার পরিচালন মুনাফা হয়েছে, ২০২১ সালের একই প্রান্তিকের তুলনায় যা ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ কম। তবে কোম্পানির মোট আয় গত বছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৭৬ ট্রিলিয়ন ওনে দাঁড়িয়েছে।
প্রাক্কলনে আরো বলা হয়, স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফা প্রান্তিকওয়ারি ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ এবং মোট আয় ১ দশমিক ৬ শতাংশ কমেছে। কোম্পানিটি বিস্তারিত তথ্য না জানালেও শিগগিরই আয়-ব্যয়ের উপাত্ত সবিস্তারে জানাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোরিয়া হেরাল্ড বলছে, ২৭ অক্টোবর তৃতীয় প্রান্তিকে আয়-ব্যয়ের সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করবে স্যামসাং।
একদল বিশ্লেষকের আয়ের পূর্বাভাস থেকে কম আয় করেছে স্যামসাং। ২১টি ব্রোকারেজ হাউজের উপাত্ত সমন্বয় করে এফএনগাইডের পূর্বাভাস ছিল, তৃতীয় প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফা ও মোট আয় হবে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ও ৭৮ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ওন।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে সুদহার বাড়াতে বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে গাড়ি, বাড়ি ও ভোক্তাপণ্য ক্রয়ে যারা ব্যাংকঋণের ওপর নির্ভর করত তারা তা কমিয়ে দিয়েছে।
চই দো-ইওন নামে শিনহান সিকিউরিটিজের এক বিশ্লেষক জানান, স্মার্টফোন, পিসি ও টিভির চাহিদা দ্রুত কমছে। সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হলো সেমিকন্ডাক্টরের ক্রয়াদেশেও বড় আকারের পতন হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আরো কয়েক প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের আয় কমবে। চাহিদায় শ্লথগতির কারণে মেমোরি চিপের চাহিদাও কমবে।
সম্প্রতি প্রকাশিক এক প্রতিবেদনে মুডি’স ইনভেস্টরস সার্ভিস জানায়, চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে ডির্যাম ও ন্যান্ড মেমোরি শিল্প বড় আকারের ধাক্কা খাবে। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধেও চাপের মধ্যে থাকবে এ শিল্প। কভিড-১৯ মহামারীর কারণে স্মার্টফোন ও কম্পিউটার বিক্রিতে যে চাঙ্গা ভাব দেখা গিয়েছিল সেটি এখন আর নেই। গত কয়েক প্রান্তিকে যে বিক্রি কমছে তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তৃতীয় প্রান্তিকের উপাত্তে।
কোরিয়া হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চতুর্থ প্রান্তিক নিয়েও স্যামসাংয়ের তেমন আশাবাদী হওয়ার কারণ নেই। শিল্পোৎপাদন খাতে শ্লথগতিতে সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা নিকট ভবিষ্যতে চাঙ্গা হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এফএনগাইডের পূর্বাভাসে বলা হয়, পরবর্তী প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের পরিচালন মুনাফা ১০ ট্রিলিয়ন ওনের নিচে নেমে আসতে পারে।
বৈশ্বিক বাজার বিশ্লেষক সংস্থা ট্রেন্ডফোর্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চতুর্থ প্রান্তিকে ডির্যাম ও ন্যান্ড ফ্ল্যাশের দাম যথাক্রমে ১৩ থেকে ১৮ ও ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমবে।
স্যামমোবাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে সেমিকন্ডাক্টর রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় ভুগেছে স্যামসাং। চীনের সেমিকন্ডাক্টর খাতকে কোণঠাসা রাখতে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে জো বাইডেন প্রশাসন। এতে ভুগেছে স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্সের মতো দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট। কারণ তাদের উল্লেখযোগ্য পণ্য উৎপাদন হয় চীনভিত্তিক কারখানাগুলোয়।