শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম যদি পুরোপুরি ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে আগামী পাঁচ বছর পর থেকে একটু পরিবর্তন দেখতে শুরু করবো। দশ বছর পর বড় পরিবর্তন দেখতে পাবো, সোমবার (অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে কন্যা শিশুদের নিয়ে ব্র্যাকের আয়োজনে এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে পরিবর্তন রাতারাতি হয় না, সময় লাগে। কিন্তু যদি খুব ভালোভাবে করতে পারি তাহলে আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে শিখতে শুরু করবে, তাদের মাধ্য দিয়ে তাদের পরিবারে চিন্তাগুলো চলে যাবে, চর্চাগুলো চলে যাবে। তার মধ্য দিয়ে আমরা একটা বড় পরিবর্তন আশা করতে পারি।
কন্যা শিশুদের অধিকার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘নারীর অবস্থা, অবস্থান পড়াশোনা, তার অধিকার, পোশাকের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার এবং ধর্ষণ নিয়েও কথা আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজ মনে করবে ধর্ষণ হলে ধর্ষিতার সম্ভ্রমহানী ঘটে, ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্ষণ চলতে থাকবে। এটা একটা হাতিয়ার হিসেবে কেউ না কেউ ব্যবহার করবে। যুদ্ধে ব্যবহার করবে, স্বাভাবিক জায়গায় ব্যবহার করবে, প্রেমে প্রত্যাক্ষাত হয়ে ব্যবহার করবে, পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের ক্ষেত্রে ব্যবহার করবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কুকুর কামড় দিলে সম্ভ্রম যায় না, কিন্তু ধর্ষিত হলে সম্ভ্রম যায়। নিশ্চয়ই সম্ভ্রম নারীর কোনো বিশেষ অঙ্গে থাকে না। অতএব ধর্ষণের সঙ্গে সম্ভ্রমের কোনো সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন, আমি কখনই মনে করি না তাদের সম্ভ্রমহানী হয়েছিলো। তাদের একদল পশু নির্যাতন করেছিলো।
তাদের যদি কুকুরে কামড় দিতো তাহলে নিশ্চয়ই আমরা বলতাম না সম্ভ্রমহানী হয়েছিলো। তাদের পিতা ও সমাজ তাদের পরিত্যাগ করেছিলো। একজন পিতা মুজিব তাদের মেয়ের মতো করে টেনে নিয়েছিলেন, সমাজে পুনর্বাসনের চেষ্টা করেছিলেন। এখনও প্রতিদিন যেসব ঘটনা ঘটছে তা ঘটতেই থাকবে যতক্ষণ আমরা মনে করবো, ধর্ষিত হলে তার সম্ভ্রম চলে যায়।
কোনো নারীর সারাটি জীবন ধ্বংস করার জন্য একটা কিছু করলাম। সমাজও তাই মনে করছে, মেয়েটিও তাই মনে করছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বেরুতে হবে। নারীর অধিকার, মানুষের অধিকার, প্রতিষ্ঠায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শরীরে অসুস্থতা দেখা দিলে আমরা দৌড়ে চিকিৎসকের কাছে যাই। কিন্তু মানসিক সমস্যা আছে, তোলপাড় চলছে। কিন্তু কেউ স্বীকারই করবেন না। যারা জানেন তারা স্বীকার করলেও রেমিডি চাইবার ব্যবস্থা করবে না। নারীরা, মাঝ বয়সী মানুষেরা, সমাজের বড় একটা অংশ মানসিক বৈকল্যে ভোগেন। কিন্তু এটাকে কেউ স্বীকার করতে রাজি নন।
আমার বাচ্চা পড়তে পারছে না, ডিভাইসে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাচ্চাটিকে একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে, থ্যারাপিস্টের কাছে নিয়ে যাচ্ছি না কেনো? তাহলে আমার মান উজ্জত থাকবে না লোকে বলবে— মানসিক চিকিৎসকের কাছে গিয়েছ কোনো, থ্যারাপিস্টের কাছে গিয়েছ কেনো? আমার ছেলে, আমার মেয়ে কী পাগল, এরকম নানান কথা। আমরা মানসিক দ্বোটানার মধ্যে থাকি কিন্তু বাস্তবতাকে স্বীকার করতে চাই না।