দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর যৌক্তিকতার কোনো অভাব নেই, বিশেষ করে গত এক দশকে এ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কভিডকালীন অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্বব্যাপী পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ব্যাহত করেছে, যেটি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরো প্রকট হয়েছে। সেই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির তারল্যের উচ্চ সরবরাহ থেকে মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে, যার ফলে পণ্যের মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতিগুলোয় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চরম চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। বড় অর্থনীতির দেশগুলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নতুন নতুন কৌশল পুনর্বিবেচনা করছে। সে অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা আরো বাড়াতে হবে।
গতকাল ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) কর্তৃক আয়োজিত সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টস (সাফা) সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কনফারেন্সের আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান পারভীন মাহমুদ, আইসিএবির সভাপতি মো. শাহাদাত্ হোসেন, সাফা সভাপতি এইচএম হেনায়াকে বান্দারা। আইসিএবির সাবেক সভাপতি এবং কাউন্সিল সদস্য মো. হুমায়ুন কবির সমাপ্তি অধিবেশনে পুরো সম্মেলনের সারসংক্ষেপ প্রদান করেন।
সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রায় ৩০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ আল মারুফ খান (বাংলাদেশ), সিএ চন্দ্রশেখর বসন্ত চিতালে (ভারত), এস এমএস সঞ্জয় বান্দারা (শ্রীলংকা) এবং গ্লোবাল রিপোর্টিং ইনিশিয়েটিভ (জিআরআই) দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক ডা. অদিতি হালদার, সুশীল কুমার গয়াল (ভারত), সিএমএ রাজু আইয়ার পিচুমনি, (ভারত), আওয়াইস ইয়াসিন এফসিএমএ, (পাকিস্তান), অধ্যাপক লক্ষ্মণ আর. ওয়াটাওয়ালা (শ্রীলংকা) ও নুয়ান উইথানেজ (শ্রীলংকা)।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্বের অনেক দেশের কাছে উদাহরণ। ২০২৬ সালের মধ্যে দেশটি উন্নত অর্থনীতিতে উন্নীত হবে। উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আমাদের এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে হবে। তাই আঞ্চলিক সংযোগ অপরিহার্য। আমাদের চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে, তবে আঞ্চলিকভাবে একসঙ্গে কাজ করলে আমরা এগিয়ে যেতে পারি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রকৃত সম্ভাবনার তুলনায় এ প্রবৃদ্ধির গতি অনেক কম। ২০১৫-১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য ছয় গুণ বেড়েছে। কিন্তু এখনো আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে আঞ্চলিক সংযোগ বৃদ্ধিতে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে হবে।
আইসিএবি সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে আমাদের সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিং এবং গ্রিন ফাইন্যান্সের দিকে নজর দিতে হবে। অ্যাকাউন্ট্যান্সি পেশা সবসময় বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় তথ্য ও ডাটা প্রদান করে কর্তৃপক্ষের দক্ষতা বাড়াতে এবং পরিবেশগত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে।
যুক্তরাজ্যের অ্যালায়েন্স ম্যানচেস্টার বিজনেস স্কুলের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর ড. জাভেদ সিদ্দিকী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বলেন, টেকসই ফাইন্যান্স মানে নবায়নযোগ্য শক্তিতে ‘টেকসই’ বিনিয়োগ। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের করপোরেট সেক্টর মূলত পারিবারিক আধিপত্য এবং টেকসই বিষয়গুলোর প্রতি তাদের খুব সীমিত বোঝাপড়া ও আগ্রহ রয়েছে। এ ধরনের প্রেক্ষাপটে অডিটিংসহ গুরুত্বপূর্ণ করপোরেট গভর্ন্যান্স প্রক্রিয়াগুলোকে একটি অপ্রয়োজনীয় প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ফলে অডিট ফি বাংলাদেশে অনেক কম। বাংলাদেশ ব্যাংক বোর্ডের পরিচালক মাহবুব আহমেদ এ সেশন সঞ্চালনা করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সম্মেলনের দ্বিতীয় সেশন সঞ্চালনা করেন। আইসিএবির কাউন্সিল সদস্য এবং অংশীদার হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস সাব্বির আহমেদ, আঞ্চলিক অর্থনীতির বর্তমান প্রবণতা: পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্সি সংস্থার ভূমিকা বিষয়ে আরেকটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, পেশাদার অ্যাকাউন্টিং সংস্থাগুলো ব্যবহারিক অন্তর্দৃষ্টির মাধ্যমে একটি দেশের বিনিয়োগবান্ধব সহজ উন্নয়ন সূচক উন্নতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।