গত শুক্রবারের পর উত্তর কোরিয়া এই দ্বিতীয় বার বাফার জোনে গোলা নিক্ষেপ করলো। শুক্রবারও উত্তর কোরিয়া শত শত গোলা নিক্ষেপ করেছিল। এ বছর ব্যাপক অস্ত্র পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া।
সমুদ্রে গোলা নিক্ষেপ করে দক্ষিণ কোরিয়ার বার্ষিক সামরিক মহড়ার জবাব দিলো উত্তর কোরিয়া। গোলা নিক্ষেপের স্থান দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বেশ কাছে। এর এক দিন আগেই ওই এলাকায় বার্ষিক মহড়া শুরু করে সিউল।
দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ এক বিবৃতিতে বলেন, উত্তর কোরিয়া তার পশ্চিম উপকুল থেকে ১০০টি এবং পূর্ব উপকুল থেকে ১৫০ টি গোলা নিক্ষেপ করে। তাদের সামরিক বাহিনী উত্তর কোরিয়াকে এই গোলা নিক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে দু পক্ষের মধ্যে সহিংসতার কোন খবর পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ কোরিয়া বলেছে, উত্তর কোরিয়ার গোলা তাদের সামুদ্রিক অঞ্চলে গিয়ে পড়েনি তবে দুই কোরিয়ার মাঝে সামুদ্রিক বাফার জোনে গিয়ে পড়েছে। এই নিরপেক্ষ স্থানটি ২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় যাতে দুই কোরিয়ার মধ্যকার প্রত্যক্ষ সংঘাত কমিয়ে আনা যায়।
বিশেষেজ্ঞরা বলছেন, অস্ত্রের ভান্ডার সম্প্রসারণ এবং প্রতিপক্ষের সঙ্গে আগামিতে দরকষাকষিতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার জন্য উত্তর কোরিয়া এই অস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। কদিন আগেই উত্তর কোরিয়ার একটি মিসাইল জাপানের উপর দিয়ে চার হাজার কিলোমিটার দূরে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে।
উত্তর কোরিয়া একাধিকবার জানিয়েছে, তাদের সাম্প্রতিক ক্ষেপনাস্ত্র পরীক্ষাগুলো ছিল দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে পারমানবিক আক্রমণের প্রস্তুতি। দক্ষিণ কোরিয়া দাবি করেছে, কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি স্থিতিশীলতা খর্ব করে এমন পরীক্ষা উত্তর কোরিয়াকে বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে তারা পরিস্থিতির উপর নিবিড় নজরদারি করছে।
সাধারণত উত্তর কোরিয়ার আর্টিলারি পরীক্ষাগুলি তার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের চেয়ে বাইরের মনোযোগ কম আকর্ষণ করে। কিন্তু এর সামনের দিকে মোতায়েন করা দূর-পাল্লার কামানগুলো দক্ষিণ কোরিয়ার জনবহুল অঞ্চলের জন্য একটি গুরুতর নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে। এগুলো শহর উত্তর কোরিয়ার সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে।
গত ২৫শে সেপ্টেম্বর থেকে কমপক্ষে ১৫টি মিসাইল পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে একটি ছিল মধ্যবর্তী-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা জাপানের উপর দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে পড়েছিল। এই মিসাইল দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে থাকা মার্কিন অঞ্চল গুয়াম এবং তারও দূরে হামলা করা সম্ভব। এসব মিসাইল পরীক্ষার কারণে মঙ্গলবার টোকিও উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
পিয়ংইয়ংয়ের রকেট শিল্প মন্ত্রণালয় এবং চারটি ব্যবসায়িক সংস্থা সহ পাঁচটি সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োশিমাসা হায়াশি এই শাস্তিমূলক ঘোষণা দেয়ার সময় বলেন, উত্তর কোরিয়া এই বছর ২৩ বার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। পিয়ংইয়ংয়ের পদক্ষেপগুলি হিংসাত্মক এবং সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য।
এদিকে দক্ষিণ কোরিয়াও প্রায় পাঁচ বছর পর উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শুক্রবার ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নে জড়িত উত্তর কোরিয়ার ১৫ ব্যক্তি এবং ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে তারা।
কিছু বিদেশী বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন শেষ পর্যন্ত তার সম্প্রসারিত অস্ত্রের ভাণ্ডার ব্যবহার করে পশ্চিমাদের কাছে উত্তর কোরিয়াকে একটি বৈধ পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসাবে মেনে নিতে বাধ্য করতে চান। পাশাপাশি তিনি উত্তর কোরিয়ার উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্যেও চাপ দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।