করোনার জটে অনেক প্রতিষ্ঠানেই আটকে আছে নিয়োগ। প্রার্থী বাছাইয়ের কোনো পরীক্ষাও আয়োজন করতে পারেনি দীর্ঘ এই সময়ে। অবশেষে কর্মী নিয়োগের পরীক্ষা ও বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
আজ শুক্রবার নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করেছে এমন ১৪টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। আজকের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবে প্রায় দশ লাখ চাকরিপ্রার্থী। বেকারদের জন্য এই পরীক্ষা সুসংবাদ হলেও বিপত্তি ঘটেছে ভোগান্তি নিয়ে।
একই দিনে একাধিক পরীক্ষা আয়োজন করায় অনেক প্রার্থী পড়েছেন বিপাকে। এমন অনেক প্রার্থী রয়েছেন যারা আবেদন করেও একই দিনে এবং একই সময়ে পরীক্ষা থাকায় একটি ছাড়া অন্যগুলোতে অংশ নিতে পারছেন না। আবার একই সময়ে পরীক্ষা থাকায় ভোগান্তি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে অনেক চাকরিপ্রার্থীকে।
সবচেয়ে বেশি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা সমাজসেবা অধিদফতরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে। সারা দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এ পদে আবেদন করেছেন ছয় লাখ ৬২ হাজার ২৭০ জন। শূন্য পদের হিসাবে প্রতিটি পদের জন্য লড়বেন এক হাজার ৪৩০ জন।
এর পরই রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে চাকরিপ্রত্যাশীদের সংখ্যা। এ পদে আবেদন করেছেন দুই লাখ ৫৫ হাজার ২৯২ জন। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ পদের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
এ ছাড়া অন্যান্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদেও আজ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে তিনটি পদে ৩২ হাজার ৩৮৬ জন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা পদে এক হাজার ২৯০ জন, গণযোগাযোগ অধিদপ্তরে ঊর্ধ্বতন কণ্ঠশিল্পী পদে ১০০ জন, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের তিনটি পদে ১২৬ জন, বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেডের দু’টি পদে ৬৪১ জন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে এক হাজার ৩৭০ জন, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের ১টি পদে তিন হাজার ৮৭৭ জন, প্রিমিয়ার ব্যাংকের তিনটি পদে ছয় হাজার ৫৩০ জন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষে ২৫৮ জন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউটের ২টি পদে মৌখিক পরীক্ষায় ২২ জন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষে চার হাজার ৭৩৭ জন। এ ছাড়া বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে পরীক্ষাও হবে আজ। তবে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা জানা যায়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে তাদের নানা ভোগান্তির কথা। আজ সারা দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ইনস্টিটিউট ও অধিদফতরসহ ১৪টি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পদে আবেদনকারীর সংখ্যা ৯ লাখ ৬৮ হাজার ৮৯৯ জন।
এর আগে গত দুই দিন থেকেই একই দিনে একাধিক পরীক্ষা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চাকরির গ্রুপগুলোতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক চাকরিপ্রার্থী। অনেকেই দিনটিকে ‘পরীক্ষা দিবস’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। ভোগান্তির কথা বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় এবং পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন অনেক চাকরিপ্রার্থী।
কিন্তু পরীক্ষার প্রস্তুতি ও রুটিন আগেই তৈরি হওয়ায় পরীক্ষার তারিখ ও সময় পরিবর্তনের সুযোগ পায়নি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
সূত্র জানিয়েছে সকাল, দুপুর ও বিকেলে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। একই দিনে কোনো কোনো প্রার্থীর তিন থেকে চারটি পরীক্ষা পড়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা পড়েছে একই সময়ে। এর মধ্যে সমাজসেবা অধিদফতরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদের পরীক্ষা পড়েছে একই সময়ে।
গত বছরও একই দিনে ১৫ থেকে ১৬টি চাকরির পরীক্ষা নেয়া হয়। সে সময় প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছিল, করোনার কারণে বিধিনিষেধ থাকায় নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ ছিল। বিধি নিষেধ উঠে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকা পরীক্ষা নেয়া শুরু করেছে। সে কারণেই একসাথে পরীক্ষার সূচি পড়েছে।