বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এমপি বলেছেন,মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে ভেজিটেবল ফ্যাট ও প্রচুর পাম অয়েলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে। উচ্চশুল্ক হারের কারণে সে পরিমাণ বাংলাদেশের পণ্য মালয়েশিয়ায় রফতানি করা সম্ভব হয় না। সংগত কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান অনেক বেশি।
শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাসিমের সঙ্গে এক বৈঠকে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিন ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের অফিস কক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় করেন ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাসিম। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) মো. আব্দুর রহিমসহ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা এবং মালয়েশিয়ান হাইকমিশনের কাউন্সিলর আনিস ওয়াজদি মো. ইউসুফ ও ফার্স্ট সেক্রেটারি হোদ আশজুয়ান আবদ সামাত উপস্থিত ছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরো বলেন, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে ৩২৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। একই সময়ে মাত্র ৩৩ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে। বাণিজ্য ঘাটতি ২৯৫ কোটি ১৬ লাখ ৯০ হাজার ডলার। এ বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পণ্য রফতানি বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। চলমান এ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এরই মধ্যে বেশকিছু রফতানি পণ্যের তালিকা শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রদানের জন্য মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। এ শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া গেলে মালয়েশিয়ার বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পণ্য রফতানি বাড়বে।
মতবিনিময়কালে মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাসিম বলেন, বাংলাদেশে গাড়ি রফতানি করতে উচ্চহারে শুল্ক পরিশোধ করতে হয় রফতানিকারকদের। এর প্রভাবে এ দেশে গাড়ি রফতানি করতে পারছে না মালয়েশিয়া।
তিনি আরো বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে আগ্রহী। মালয়েশিয়ার তৈরি গাড়ি বিশ্ববাজারে বেশ জনপ্রিয়। উচ্চ শুল্কহারের কারণে এসব গাড়ি বাংলাদেশে রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না।
শুল্ক কমালে এগুলো বাংলাদেশে বাজারজাত করা সম্ভব হবে। উভয় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির আরো অনেক সুযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়া এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য দেশটির সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) স্বাক্ষর করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এফটিএ স্বাক্ষরের বিষয়ে উভয় দেশের মধ্যে আলোচনাও এগিয়ে গিয়েছে। মালয়েশিয়া এগিয়ে এলে এ চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব।
এতে করে উভয় দেশ উপকৃত হবে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, প্লাস্টিক, হালকা যন্ত্রপাতি ও চামড়াজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য মালয়েশিয়ায় রফতানি করছে।
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার পাম অয়েল, ফার্নিচার, চকোলেট, ফলমূলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশে এসব পণ্যের কারখানা স্থাপন করলে অধিক লাভবান হবে। এখানে প্রচুর দক্ষ জনশক্তি রয়েছে। ফলে কম খরচে এসব পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব।
মালয়েশিয়ার শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার ফার্নিচার, রাবারজাত পণ্য, চকোলেট ও শুকনো খাদ্যপণ্যের চাহিদা রয়েছে। উভয় দেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে আগ্রহী।