বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৭ পূর্বাহ্ন

চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্য পণ্যের উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমেছে

প্রতিনিধির / ৭৮ বার
আপডেট : বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২
চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্য পণ্যের উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমেছে
চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্য পণ্যের উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমেছে

ভোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে ঠিকমতো কারখানা চালাতে পারছে না তারা, যার কারণে আটা, ময়দা ও চিনির উৎপাদন কমছে। বাজারে সরবরাহে সংকট হচ্ছে। একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচও।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়েও আটা, ময়দা, চিনি ও ভোজ্য তেলের মতো নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও বাজার মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে ওঠে। সেখানে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দিনের একটা সময় কারখানাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ থাকছে। দ্রুত এসব কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ করা প্রয়োজন। তা না হলে বাজার পরিস্থিতি বাগে রাখা সহজ হবে না।

চলমান গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্য পণ্য আটা, ময়দা ও চিনির উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। এতে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি হচ্ছে, বাড়ছে দাম। অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। বিষয়টিতে এখনই গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

ভোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে ঠিকমতো কারখানা চালাতে পারছে না তারা, যার কারণে আটা, ময়দা ও চিনির উৎপাদন কমছে। বাজারে সরবরাহে সংকট হচ্ছে। একই সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচও।

গত সোম ও মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও জোয়ারসাহারা বাজারে গেলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে সব কম্পানিরই আটা, ময়দা ও চিনির সরবরাহ কম। অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও পর্যাপ্ত মালপত্র পাচ্ছেন না তাঁরা।

কারওয়ান বাজারের মেসার্স নূরজাহান স্টোরের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী তারেকুজ্জামান বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী কোনো কম্পানিই আটা, ময়দা ও চিনি দিতে পারছে না। অগ্রিম টাকা দেওয়া আছে তাদের। কম্পানি আমাদের বলছে, গ্যাস-বিদ্যুতের কারণে মালপত্র উৎপাদন কমে গেছে, যার কারণে দিতে পারছে না। ’

জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘গ্যাসসংকটের কারণে আমাদের চিনি, আটা, ময়দাসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। আগে আমাদের কারখানাগুলো সার্বক্ষণিক চালু রাখা হতো। গত এক-দেড় মাস থেকে একটা লম্বা সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে, যার কারণে উৎপাদন কমে গেছে। তাই বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দিতে পারছি না। ’

বসুন্ধরা ফুডের বিভাগীয় প্রধান (বিক্রয় ও বিতরণ) রেদোয়ানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কারখানাগুলো শতভাগ বিদ্যুিভত্তিক। অতিরিক্ত লোড শেডিংয়ের কারণে আটা ও ময়দা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য কারখানাগুলো সপ্তাহে এক দিন করে সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে মাসে গড়ে উৎপাদন কমে গেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। ফলে বেড়ে গেছে উৎপাদন ব্যয়। কমে গেছে সরবরাহ। ’

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের নির্বাহী পরিচালক (কারিগরি) কার্তিক চন্দ্র দাস  বলেন, ‘গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে আমাদের কারখানার উৎপাদন ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান না হলে কারখানায় উৎপাদন কার্যত বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না। কারণ উৎপাদন কমে যাওয়ায় খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ’

গতকাল রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারে পাইকারি ও খুচরা দোকান মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম  বলেন, ‘এক মাস ধরে আমরা চাহিদা অনুযায়ী আটা, ময়দা ও চিনি আনতে পারছি না। ১০ বস্তা চাইলে তিন থেকে চার বস্তা পাওয়া যাচ্ছে। বাজারে জিনিস কম থাকায় দামও বেড়ে যাচ্ছে। ’ তিনি জানান, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে চিনি কেজিতে ১৫ টাকা বেড়ে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা আটা ও ময়দা কেজিতে নতুন করে পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে। এখন খোলা আটা কেজি ৬০ টাকা এবং খোলা ময়দা কেজি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম  বলেন, শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শুধু যে রপ্তানি পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে তা নয়, অভ্যন্তরীণ চাহিদার পণ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। সরকারকে এখনই গুরুত্ব দিয়ে ভোগ্য পণ্য উৎপাদনকারী বড় কারখানাগুলোতে আলাদা লাইনের মাধ্যমে হলেও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে হবে।

ম. তামিম বলেন, রাজধানীতেই এখন দৈনিক ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। যারা ক্যাপটিভ পাওয়ার (গ্যাস দিয়ে নিজস্ব উৎপাদিত বিদ্যুৎ) দিয়ে কারখানা চালাচ্ছে, তাদের অবস্থা আরো খারাপ। তারা গ্যাসসংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে কারখানাও ঠিকমতো চালু রাখতে পারছে না।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাইস মিল, আটা, ময়দা ও তেলের কারখানাগুলোকে অবশ্যই লোড শেডিংয়ের বাইরে রাখতে হবে। তা না হলে ভোগ্য পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে সংকট তৈরি হবে। তাতে দাম আরো বেড়ে যেতে পারে। ভোগ্য পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে কারখানাগুলো চালু রাখতেই হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ