আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে বাংলাদেশবিরোধী একটি চক্র বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এদের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ ধরনের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরকারের বক্তব্যগুলো যথাযথভাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরার পাশাপাশি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
জানা যায়, অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কাজ করতে কূটনীতিকদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের পাশাপাশি সংসদীয় কমিটির সদস্যরা বিদেশ সফরে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ঢাকা ডায়ালগ আয়োজনের প্রস্তাব দেন কমিটির সদস্যরা।বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কমিটির সদস্য ড. একে আবদুল মোমেন বলেন, ইউরোপের বেশকিছু দেশে সরকার তথা দেশের বিরুদ্ধে একটি চক্র ব্যাপক আকারে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এগুলো প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তিনি কমিটির পরামর্শ কামনা করেন।
বিদেশে অবস্থান করে দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকা করা হয়েছে। সরকার দেশবিরোধী চক্রের এমন ২২ জনের তালিকা তৈরি করেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তবে ওই ষড়যন্ত্রকারীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
কমিটির সভাপতি কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান এ সময় বলেন, দেশবিরোধী চক্রের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর কর্মতৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রয়োজনে সংসদীয় কমিটি এ ব্যাপারে সহযোগিতা দেবে।
কমিটির আরেক সদস্য নাহিম রাজ্জাক সরকার তথা দেশবিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্রগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হলে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি বেশি করে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
অপর সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, সরকার তথা দেশবিরোধী অপশক্তিগুলোর ক্রমাগত অপপ্রচারের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কিছু দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। এ ছাড়া সুইডেনের নেত্র নিউজ মিথ্যা ও অর্ধসত্য তথ্য মিলিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে।
কমিটির সদস্য মো. হাবিবে মিল্লাত এ সময় বলেন, সরকারবিরোধী তথা দেশবিরোধী চক্রটি দেশের বাইরে বসে বিভিন্ন ধরনের অসত্য তথ্য দিয়ে দেশের মধ্যে একটি অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশবিরোধী চক্রের ২২ জনের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেশবিরোধী প্রচারণায় অসত্য তথ্যগুলোর বিপরীতে সঠিক তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন প্রচার করতে হবে। এজন্য দল থেকেও একটি দিকনির্দেশনা থাকা দরকার বলে হাবিবে মিল্লাত জানান।
তিনি বলেন, সুইডেন, ব্রাসেলসসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশে বাংলাদেশবিরোধী প্রচারণা বেশি হচ্ছে বিধায় এদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং কমিটির পক্ষ থেকে দেশগুলো সফর করার জন্য তিনি কমিটির সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
হাবিবে মিল্লাত বলেন, এসব দেশ ৬ মাসের মধ্যে ভিজিট করতে হবে। না হলে পরে কমিটির সদস্যরা সময় দিতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, দেশবিরোধী অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে ‘ঢাকা ডায়ালগ’ একটি বড় প্ল্যাটফরম হতে পারে। তাই এই অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশে আয়োজনের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান হাবিবে মিল্লাত।
এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে অংশগ্রহণের ওপর একটি প্রতিবেদন কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া ব্রুনাইয়ের সুলতানের বাংলাদেশ ভ্রমণের ওপর আরও একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।সভায় ডেনমার্কে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতদের পারফরম্যান্স রিভিউয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, গোলাম ফারুক প্রিন্স, মো. হাবিবে মিল্লাত ও নাহিম রাজ্জাক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।