রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন

পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে বিদ্যুৎসংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প খাত

প্রতিনিধির / ১২৩১ বার
আপডেট : শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২
পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে বিদ্যুৎসংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প খাত
পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে বিদ্যুৎসংকটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প খাত

সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে এবং জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে বন্ধ থাকছে অনেকটা সময় ধরে। ফলে সঞ্চালন লাইনে প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ অসম্ভব হয়ে পড়েছে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে। পরিকল্পিত লোডশেডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাড়তি লোডশেডিং। সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানি খরচ কমাতে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না।

অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর চালিকাশক্তি হিসেবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। চলমান লোডশেডিং-এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের জনজীবনে চরম ভোগান্তি নেমে এসেছে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির চাপে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে সাম্প্রতিক গত কয়েক মাসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে এখনো। এর মধ্যে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। জ্বালানি তেলের মূল্যও অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। যার চাপে এমনিতেই দেশে অর্থনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহনের ভাড়া, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। যা সরাসরি সাধারণ মানুষকে নতুন করে চাপে ফেলে দিয়েছে। ইদানীং লোডশেডিংয়ের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় কলকারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। ফলে উৎপাদিত সামগ্রীর মূল্য বেড়েছে। বাজারে সরবরাহ কম হওয়ায় আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জ্বালানি সাশ্রয়ে গত ১৯ জুলাই থেকে দেশে পরিকল্পিত লোডশেডিং শুরু করে সরকার। দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের কথা থাকলেও তা মানা হয়নি শুরুতে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ধীরে ধীরে হলেও লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমে আসছিল। তখন বলা হয়েছিল, অক্টোবর থেকে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমে আসবে এবং তা ক্রমেই বিদায় নেবে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বর্তমানে দেশের চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে অনেক কম। ফলে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

বিদ্যুত্সংকটের কারণে বিভিন্ন দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমলে ক্রেতার পরিমাণ কমে গেছে। জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্যের কারণে বিকল্প উপায়ে জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রচেষ্টাও একটানা অব্যাহত রাখা যাচ্ছে না। বাসাবাড়িতে জেনারেটর বন্ধ থাকছে। যারা জেনারেটর চালাচ্ছেন, তাদের এজন্য অনেক বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। ফলে শহরাঞ্চলে বাসাভাড়ার সঙ্গে প্রদেয় সার্ভিস চার্জ ইদানীং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকটাই বেড়ে গেছে।

ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জেলায় লোডশেডিংয়ের পরিমাণ খুব বেশি হওয়ায় ক্ষুদ্র শিল্পকারখানা, তাঁতশিল্প, পোলটি ফার্ম, ডেইরি ফার্ম, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বন্ধ হওয়ার পথে দাঁড়িয়েছে। যার সঙ্গে জড়িত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা, সাধারণ কৃষক, খামারি, তাঁতি প্রমুখ ভয়াবহ সংকটে পড়ে গেছেন। করোনা মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন তারা লোডশেডিংয়ের ক্রমবর্ধমান চাপে তাদের সব প্রচেষ্টা থেমে যাচ্ছে একের পর এক। এমনিতেই বৈশ্বিক মন্দাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে গিয়ে সবাইকে নানা চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে হচ্ছে।

বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল এবং গতিশীল রাখার উদ্যোগ অনেকটা কাজ দিলেও সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ সংকট তথা লোডশেডিং থমকে দিচ্ছে সবকিছুকেই। কারণ, এখন বিদ্যুৎ-নির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থা, জনজীবনে প্রতিটি পদক্ষেপে বিদ্যুতের সার্বক্ষণিক ব্যবহার, ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদ্যুৎ নির্ভরতাকে কিছুতেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ