মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৫২ পূর্বাহ্ন

মূল্যস্ফীতি লাগামহীন,স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালে নেই কিছুই

প্রতিনিধির / ৬৪ বার
আপডেট : শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২
মূল্যস্ফীতি লাগামহীন,স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালে নেই কিছুই
মূল্যস্ফীতি লাগামহীন,স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালে নেই কিছুই

গতকাল শুক্রবার বেলাল হোসেনের সঙ্গে কথা হয় তুরাগ এলাকার কামারপাড়াবাজারে। এই এলাকারই একটি গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন তিনি। করোনা মহামারির আগে যা বেতন পেতেন তা দিয়ে এক রুমের একটি বাসায় এক বাচ্চাসহ পরিবার নিয়ে থাকতেন। যা বেতন পেতেন তা দিয়ে ভালোই চলে যেত। সামান্য কিছু টাকা দেশের বাড়িতেও পাঠাতে পারতেন। কিন্তু এখন জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে যে, মাসের ১৫ তারিখের পর আর চলতে পারেন না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, সংসার চালানোর দুশ্চিন্তায় রাতে আর ঘুম আসে না।

কোন সবজি কিনবেন তা ঠিক করতে পারছিলেন না বেলাল হোসেন। কারণ, যে সবজির দামই তিনি জানতে চান, সবজি বিক্রেতার উত্তর, কেজি ৬০ টাকা, আবার কোনোটা ৮০ টাকা। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। একমাত্র পেঁপের দাম কিছুটা কম। তা-ও ৩০ টাকা কেজি।

শুধু বেলাল হোসেনই নয়, সব স্বল্প আয়ের মানুষের একই অবস্থা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) সম্প্রতি তাদের এক গবেষণায় জানিয়েছে, দেশে মূল্যস্ফীতি লাগামহীন, শিগিগরই সমাধানের লক্ষণ নেই। পাশাপাশি অনেকেই খাদ্য ব্যয় কমিয়ে আনতে খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছেন মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন আমিষ। সংস্থাটি বলেছে, বর্তমানে রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা। মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা।

ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের শুধু সবজি ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য পণ্য কিনতেই তার বেতনে সংকুলান হচ্ছে না। গতকাল রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর অন্যতম কাওরানবাজারের পাশাপাশি, তুরাগ এলাকার কামারপাড়াবাজার ও শান্তিনগর বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে একটু বড় আকারের ফুলকপি প্রতিটি ৭০ থেকে ৯০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বেগুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করল্লা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুর মুখি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, টম্যাটো ১২০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, আলু ৩০ টাকা ও কাঁচামরিচ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

সবজির দাম কমা প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের বিক্রেতা মো. হাকিম বলেন, এবার তো সারা বছরই সবজির বাজার চড়া গেল। তবে কয়েক দিন আগে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের অনেক জায়গায় সবজিখেত নষ্ট হওয়ায় দাম আরো কিছুটা বেড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে শীত মৌসুমের সবজি পুরোদমে আসতে শুরু করবে। তখন সবজির দাম কমে যাবে বলে আশা করছি।

সবজির পাশাপাশি বাজারে মাছের দামও চড়া। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাষের রুই ৩২০ থেকে ৩৫০, কাতল ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, পাবদা ৪৫০ থেকে ৬০০, তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা, কই ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২১০ থেকে ২৪০ টাকা, শিং ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে; যা এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি।

ডিমের হালি এখনো ৫০ টাকা!

নতুন করে আর ডিমের দাম না বাড়লেও এখনো বাড়তি দরেই তা বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বাজারে প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হয় ৪৭ থেকে ৫০ টাকায়। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকালের খুচরা বাজারদরের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বর্তমানে বাজারে গত বছরের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে তা ১৭৫ থেকে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া দেশি সোনালি জাতের মুরগি ৩২০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা ও গরুর মাংস ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

চিনি নেই বাজারে!

গতকাল কাওরানবাজারের মেসার্স আল-আমিন ট্রেডার্স, আলী স্টোর, জব্বার স্টোর ও ভাই ভাই জেনারেল স্টোরসহ বেশ কয়েকটি দোকানে খোঁজ নিয়ে চিনি পাওয়া যায়নি। অনেক ঘুরে দু-একটি দোকানে চিনি পাওয়া গেলেও বিক্রি করা হচ্ছে সরকারনির্ধারিত দরে চেয়ে বেশি দামে। শুধু তাই নয়, চিনির সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্তও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিলগুলো থেকে এখনো বাজারে চিনি সরবরাহ করা হয়নি। কবে সরবরাহ করা হবে তাও জানানো হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর সরকার প্রতি কেজি চিনিতে ছয় টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনির দাম ৯০ টাকা ও প্যাকেট চিনি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, মূলত দাম বেঁধে দেওয়ার পর থেকেই বাজারে মিলাররা চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন। তবে গতকাল কাওরানবাজারে দেশবন্ধু সুগার মিলকে ট্রাকে করে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি ৯৫ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।

চিনির বাজার স্বাভাবিক হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম  বলেন, বাজারে চিনির সরবরাহ নেই বললেই চলে। মিলগুলো থেকে চাহিদামতো চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, মিলাররা গ্যাসসংকটের কারণে চাহিদামতো চিনি উৎপাদন করতে পারছেন না। চিনি উৎপাদন না বাড়লে বাজার স্বাভাবিক হবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ