দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন জেলার নেতাকর্মীরা। একপক্ষ বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান এবং অপর পক্ষ কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারী। কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিও আলাদাভাবে পালন করে দুই গ্রুপ।এর আগে জেলা সম্মেলনের তফসিল বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণার আদেশ চেয়ে বুধবার (২৬ অক্টোবর) পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা তুলে নেন বাদী।
ঘরের আগুনে পুড়ছে টাঙ্গাইল জেলা বিএনপি। কমিটিসংক্রান্ত বিরোধ জেলা থেকে উপজেলা, এমনকি ওয়ার্ড পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে। ১ যুগেরও বেশি সময় পর আজ ১ নভেম্বর মঙ্গলবার বিএনপির জেলা সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে। এ সম্মেলনের মাধ্যমে বিএনপি ঘুচাতে চায় নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ।
এর আগে জেলা সম্মেলনের তফসিল বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণার আদেশ চেয়ে বুধবার (২৬ অক্টোবর) পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে মামলা করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান শফিকুল ইসলাম। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে মামলা তুলে নেন বাদী।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৪ নভেম্বরে কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খানকে আহ্বায়ক ও মওলানা ভাসানীর নাতি মাহমুদুল হক সানুকে সদস্যসচিব করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের ৩ আগস্ট ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে আবারও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহমেদ আযম খানকে আহ্বায়ক করা হলেও বাদ পড়েন সদস্যসচিব মাহমুদুল হক সানু। এ ঘটনায় জেলা বিএনপির বিশাল একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। বাদ পড়াদের অভিযোগ, আহমেদ আযম খান ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তাঁর পক্ষের লোকজন দিয়ে পকেট কমিটি গঠন করেছেন। পদবঞ্চিতরা সংবাদ সম্মেলন করে ছাইদুল হক ছাদু ও মাহমুদুল হক সানুর নেতৃত্বে বিএনপির সব কার্যক্রম চলবে বলে ঘোষণা দেন। পর্যায়ক্রমে বিদ্রোহীরা বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর বিএনপির পাল্টা কমিটি গঠন করেন।
এ অবস্থায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ১ নভেম্বর জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে বিদ্রোহী গ্রুপের পক্ষ থেকে জেলা বিএনপির সম্মেলনের তফসিল বেআইনি ও অকার্যকর ঘোষণার আদেশ চেয়ে আদালতে মামলা করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাদী মামলা তুলে নিয়েছেন। জেলা বিএনপির ১ নভেম্বরের সম্মেলনের সভাপতি পদে সাবেক সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ছাইদুল হক ছাদু, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসানুজ্জামিল শাহীন ও সদস্য আলী ইমাম তপন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল ও সাবেক সদস্যসচিব মাহমুদুল হক সানু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মোট ভোটার ২৩৫৭ জন। জেলা বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশনে কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ’
জেলা বিএনপির বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি শেষ হয়েছে। পদবঞ্চিতদের কমিটি গঠনের সাংগঠনিক কোনো বৈধতার ভিত্তি নেই। তারা যা করছে তা নিয়মবহির্ভূত ও অগঠনতান্ত্রিক কাজ। দলের ভেতর তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। কেন্দ্রে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। সর্বশেষ তারাও সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। ’
এদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব মাহমুদুল হক সানু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আহমেদ আযম খান প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছেন। এবার আমরা সম্মেলনে অংশগ্রহণ করব। আমি সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী। ’বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট খন্দকার আহসান হাবীব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএনপির ঐক্য এবং সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শক্তিশালী কমিটি দরকার। মামলা হামলা খাওয়া ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা উচিত। ’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান জানান, ‘আহ্বায়ক কমিটিতে সবাইকে স্থান দেওয়া সম্ভব নয়। পদবঞ্চিত হয়ে কয়েকজন বিরোধিতা করতেই পারেন। সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তারা স্থান পাবেন। ’