রবিবার, ০৪ জুন ২০২৩, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন

দলীয় মনোনয়নে তরুণদেরই প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা:আওয়ামী লীগ

প্রতিনিধির / ৪৫ বার
আপডেট : শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২
দলীয় মনোনয়নে তরুণদেরই প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা:আওয়ামী লীগ
দলীয় মনোনয়নে তরুণদেরই প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা:আওয়ামী লীগ

বয়স্ক এমপিরা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। দলের শীর্ষ মহল এসব নেতাকে মূল্যায়ন করলেও আওয়ামী লীগের জরিপের তথ্যে দেখা গেছে ভিন্নচিত্র। সারা দেশে বয়স্ক নেতাদের চেয়ে কয়েকশ তরুণ এগিয়ে আছেন। যারা ছাত্রলীগ করে বর্তমানে বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে মাঠে-ময়দানে কাজ করে যাচ্ছেন। অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ভাবমূর্তি রয়েছে তাদের। দল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তারা অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে নিজেদের দূরে রেখেছেন। বিষয়গুলো আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলকে নতুন করে ভাবাচ্ছে।

সংসদ নির্বাচনে বয়স্ক নেতাদের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায় আওয়ামী লীগ। শেষ বয়সে এসে তারা আখের গোছাতে ব্যস্ত। আবার অনেকে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে করেছেন নৌকার বিরোধিতা। তাই এবার দলীয় মনোনয়নে তরুণদেরই প্রাধান্য দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশব্যাপী পরিচালিত আওয়ামী লীগের একটি জরিপে তরুণ নেতাদের সম্পর্কে উঠে এসেছে ইতিবাচক তথ্য।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, সব সময় আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যোগ্য ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিয়েছে। দুর্নীতিবাজ ও বিতর্কিতদের স্থান এ দলে নেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর ব্যতিক্রম হবে না। যারা মানুষের জন্য, দেশের জন্য ও দলের জন্য কাজ করছেন তারা পুরস্কার পাবেন।দলীয় সূত্র জানিয়েছে, এবার প্রয়াত ও বয়স্ক এমপিদের পরিবারের সদস্যদের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। গত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়ে ২০টির মতো উপনির্বাচন হয়েছে। এসব উপনির্বাচনে পুরোনো এমপিদের পরিবার থেকে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন মাত্র দুজন। বাকি ১৮ জনই নতুন।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে এই ধারা অব্যাহত থাকবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা  জানান। তারা বলেন, প্রবীণ বলে বিশেষ ছাড় না দিয়ে বরং স্বচ্ছ ভাবমূর্তিসম্পন্ন দলের তরুণ নেতা যাদের বয়স ৪৫ থেকে ৫৫ বছর, এবার তাদের খুঁজে বের করা হবে।দলের হাইকমান্ড অধিকাংশ পুরোনো দলীয় এমপির ব্যাপারে হতাশ। সারা দেশে তরুণদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি, অন্যদিকে অনেক বয়স্ক নেতা স্বজনপ্রীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়েছেন। এতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য পুরোনোদের নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

তিনি  বলেন, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি এবার মনোনয়নবঞ্চিত হতে পারেন। এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনেও গতবারের প্রার্থীদের অন্তত ৩২ জন বাদ পড়েন। বাকি যাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাদের পারফরম্যান্স, দলের প্রতি আনুগত্য এবং বয়স বিবেচনায় আনা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলের শীর্ষ পর্যায়ের একজনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ৩শটি নির্বাচনি এলাকায় জরিপ কার্যক্রম চলছে। এর কাজ প্রায় শেষ। জরিপ কার্যক্রমে একাধিক টিম দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় থেকে কাজ করেছে। এই টিমের সদস্যরা প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানছেন দলীয় নেতাদের অতীত ও বর্তমান।এতে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত দলীয় এমপি, তাদের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের সদস্য এবং অনুসারী নেতাকর্মীরা গত সাড়ে ১৩ বছরে কী কী করেছেন, তাও উঠে আসছে জরিপ টিমের সদস্যদের অনুসন্ধানে।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিশ্চয় তৃণমূলে করা জরিপের প্রতিবেদন দেখেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। যারা দলকে বিক্রি করে আখের গুছিয়ে যাচ্ছেন তাদের সংখ্যা কম নয়।গণভবনে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘যে কোনো নির্বাচনে নমিনেশনে পরিবর্তন আনা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। ক্ষেত্রবিশেষ আমরা অবশ্যই যাচাই করে দেখব কার জেতার সম্ভাবনা আছে, কার নেই। কে ভোট পাবেন, কে পাবেন না।’ ইতোমধ্যে বরিশালের এমপি পঙ্কজ দেবনাথকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

গত ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আগামী নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রার্থীদের পাশ করাবেন এ ধারণা নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের নিজের যোগ্যতায় জিতে আসতে হবে। দলের সংসদ সদস্যদের কার কী অবস্থান তা জানতে জরিপ চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে দলটির সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, যারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, তারা যেই হোক কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।

এদিকে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, খাস জমি দখল, ঘুস গ্রহণ, কমিশন, চাঁদাবাজিসহ নানা দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বর্তমান সংসদের বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক।

এছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কমপক্ষে ১০ জন সাবেক সংসদ সদস্যকে নিয়ে চলছে অনুসন্ধান। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান মিতা, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সামশুল হক চৌধুরী, নজরুল ইসলাম বাবু, পঙ্কজ দেবনাথ, বিএম মোজাম্মেল হক, শফিকুল ইসলাম শিমুল প্রমুখ রয়েছেন। রাজধানী ঢাকার এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলা চলমান রয়েছে।

রাজশাহীর এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদের তথ্য পাওয়ার কথা ইতোমধ্যে জানিয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা। ১০ থেকে ২০ শতাংশ ঘুস নিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতাকে নিয়ে শুরু হয় দুদকের অনুসন্ধান। তার সম্পদ খতিয়ে দেখতে সব নথিপত্র তলব করে সংস্থাটি।নির্বাচনি এলাকায় চরমভাবে সমালোচিত আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যের দুর্নীতির অনুসন্ধান করতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এবারের সংসদ নির্বাচনে তাদের ভাগ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ