শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:২৬ অপরাহ্ন

বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে সেশনজট লাগার আশঙ্কা

প্রতিনিধির / ৮২ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২২
বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে সেশনজট লাগার আশঙ্কা
বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে সেশনজট লাগার আশঙ্কা

দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। পাশাপাশি তাঁদের বেতন-ভাতা প্রদানেও মানা হচ্ছে না সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি। অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষকের চেয়েও কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু স্নাতক পাস কর্মকর্তা বেশি বেতন পাচ্ছেন। এ ছাড়া নিয়োগ ও পদোন্নতিতেও অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না নিয়মনীতি। বিজ্ঞাপন ছাড়াই শুধু ফাইল নোটে নিয়োগের ঘটনাও ঘটছে অনেক।

নিয়োগ-পদোন্নতি আর বেতন-ভাতা প্রদানে বিরাজমান এই বিশৃঙ্খলা বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। এ লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-পদোন্নতি অভিন্ন নীতিমালা-২০২২’। এটি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথে। ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা নির্দেশিকাটি হুবহু গ্রহণ করার ব্যাপারে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড তা অনুমোদন করেছে।

৮ নভেম্বর রাতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ঘোষণা করে শিক্ষক সমিতি। সেই থেকে কর্মবিরতি চলছে।গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে সেশনজট লাগার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার চলমান আন্দোলনের অষ্টম দিন পার হয়েছে। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এই কয়েক দিনে রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ফার্মেসি, কম্পিউটার সায়েন্স, গণিত, ইংরেজি, আইন বিভাগসহ বেশির ভাগ বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল ও মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল।

শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে এসব বিভাগের পরীক্ষা হয়নি। একই সঙ্গে হয়নি কোনো ক্লাসও।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বেশ কয়েকটি বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল ও মিডটার্ম পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও তা আন্দোলনের কারণে শুরু করা সম্ভব হয়নি।এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দার বলেন, কোন কোন বিভাগের কী কী পরীক্ষা বন্ধ, তা সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানরা বলতে পারবেন।

নাম প্রকাশ না করে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে আমাদের মিডটার্ম পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। কর্মবিরতি না হলে এত দিনে পরীক্ষা হয়ে যেত। এতে আমরা পিছিয়ে পড়লাম। ’নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে শিক্ষকরা তাঁদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় আমাদের অনেক ক্ষতি হলো। ’ শিক্ষাজীবন সময়মতো শেষ করা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা।নাম প্রকাশ না করে এক ছাত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে পড়াশোনায় এমনিতেই অনেক গ্যাপ পড়েছে, এখন আবার শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন। আট দিন হলো কোনো ক্লাস নেই। হোস্টেলে থেকে শুধু খাচ্ছি আর আড্ডা দিচ্ছি। এভাবে ভালো ফলাফল আশা করা যায় না। শিক্ষকদের উচিত সন্তানতুল্য ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে ক্লাসে ফিরে আসা। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষক সমিতি যে কাজটি করছে তাতে ছাত্র-ছাত্রীদের খুব ক্ষতি হচ্ছে। বিষয়টির দ্রুত সমাধান হওয়া উচিত।শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সালেহ বলেন, ‘কর্মবিরতির ফলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হচ্ছে, এটা আমরা বুঝি। উপাচার্যকে বলা হয়েছে রিজেন্ট বোর্ড মিটিং করে আমাদের দাবিগুলো তুলে ধরতে। তিনি রিজেন্ট বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ’এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেব। প্রয়োজনে বন্ধের দিনও ক্লাস নেওয়া হবে। ’

এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের দাবির বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন। স্যারকে বলা হয়েছে রিজেন্ট বোর্ড করে শিক্ষকদের দাবি তুলে ধরতে। সেটা হলে সমস্যা সমাধান হবে। তবে দাবি না মানা পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাব। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কিউ এস মাহবুব বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতির সঙ্গে সভা হয়। শিক্ষক নেতারা যেসব সুপারিশ করেছেন, সেগুলো ইউজিসির (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। এর পরও শিক্ষকরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আমার কথার গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এখন সমস্যা সমাধানে ইউজিসি যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেভাবে কাজ হবে। আমার কিছু করার নেই। ’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষকদের অভিন্ন নীতিমালা নির্দেশিকাটি ইউজিসি হুবহু গ্রহণ করার ব্যাপারে তীব্র আপত্তি রয়েছে শিক্ষকদের। পর্যালোচনা কমিটির কোনো সুপারিশ গ্রহণ না করে রিজেন্ট বোর্ডে ইউজিসি কর্তৃক প্রেরিত অভিন্ন নীতিমালা নির্দেশিকাটিই হুবহু অনুমোদন করা হয়। এ কারণে শিক্ষকরা কর্মবিরতি ঘোষণা করেন।

প্রসঙ্গত, দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জনবল নিয়োগে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। পাশাপাশি তাঁদের বেতন-ভাতা প্রদানেও মানা হচ্ছে না সুনির্দিষ্ট কোনো নীতি। অনার্স-মাস্টার্সে প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে নিয়োগ পাওয়া প্রভাষকের চেয়েও কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধু স্নাতক পাস কর্মকর্তা বেশি বেতন পাচ্ছেন। এ ছাড়া নিয়োগ ও পদোন্নতিতেও অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না নিয়মনীতি। বিজ্ঞাপন ছাড়াই শুধু ফাইল নোটে নিয়োগের ঘটনাও ঘটছে অনেক।

নিয়োগ-পদোন্নতি আর বেতন-ভাতা প্রদানে বিরাজমান এই বিশৃঙ্খলা বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি। এ লক্ষ্যে তৈরি করা হচ্ছে ‘কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ-পদোন্নতি অভিন্ন নীতিমালা-২০২২’। এটি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার পথে। ইউজিসির অভিন্ন নীতিমালা নির্দেশিকাটি হুবহু গ্রহণ করার ব্যাপারে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড তা অনুমোদন করেছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ