ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে সিরামিকের পণ্য (টেবিলওয়্যার) রপ্তানি করে ফার সিরামিকস। তাদের গাজীপুরের কারখানার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ৩২ হাজার টেবিলওয়্যার। গ্যাসসংকটের কারণে উৎপাদন প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।
দেশে জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে একটি ফু-ওয়াং সিরামিক। গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকায় এই প্রতিষ্ঠানের কারখানা। গ্যাসসংকটে ফু-ওয়াং সিরামিক কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে গেছে। কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক কামাল সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আগে দৈনিক এক লাখ ৩০ হাজার বর্গফুট টাইলস উৎপাদন করা যেত।গ্যাস সংকটের কারণে এখন উৎপাদন নেমে এসেছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার বর্গফুটে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। বাধ্য হয়ে তিন চুল্লির মধ্যে সন্ধ্যার পর দুটি সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন দিচ্ছি। উৎপাদন কমে যাওয়ায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ’
সিরামিক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সিরামিক কারখানায় পণ্য প্রস্তুতে চুল্লিতে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ থাকতে হয়। সেই হিসেবে এই শিল্পে গ্যাস একটি অন্যতম কাঁচামাল। পণ্য উৎপাদনে ১৫-১৬ শতাংশ খরচই হয় গ্যাসের পেছনে। গ্যাসসংকটের কারণে এখন দিনে অনেক সময় কারখানা বন্ধ রাখতে হয়। চুল্লি বন্ধ করলে আবারও গরম করতে গ্যাস বেশি লাগে। গ্যাসের চাপ দরকার হয়, কারণ চুল্লি রাখতে হয় ১,১৫০ থেকে ১,২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। তাপমাত্রা কমলে উৎপাদন ব্যাহত হয়।
ফার সিরামিকস লিমিটেডের পরিচালক এবং বাংলাদেশ সিরামিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সিরামিকশিল্পে গ্যাস সরবরাহের দাবি জানিয়েছি। তবে কারখানাগুলো বিভিন্ন এলাকায় হওয়ার কারণে এটি করা সম্ভব নয়। সরকার চাইলে এলাকাভিত্তিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে পারে। ’ফু-ওয়াং ও ফার সিরামিকসের মতো সিরামিকশিল্পের অনেক কারখানাই গ্যাসসংকটের কারণে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না। কারণ সিরামিক কারখানার জন্য গ্যাস অতিপ্রয়োজনীয় জ্বালানি। যদিও এলাকাভেদে কিছু কারখানায় গ্যাসের সমস্যা কমবেশি হচ্ছে।
সিরামিক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, সিরামিক খাতে বর্তমানে ৭০টি প্রতিষ্ঠান আছে। তার মধ্যে ২৫টির বেশি বৃহৎ কারখানা চার-পাঁচ মাস ধরে তীব্র গ্যাসসংকটে ভুগছে। গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ময়মনসিংহের সিরামিকপণ্য, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার কারখানাগুলোতে দৈনিক আট থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় গ্যাসের চাপ থাকছে না। ফলে কারখানাভেদে উৎপাদন প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে, যার কারণে কম্পানিগুলো লোকসান গুনছে। এভাবে আর কয়েক মাস চলতে থাকলে কারখানা বন্ধ করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প থাকবে না বলেও উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন।
বিসিএমইএর সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম মোল্লা বলেন, সিরামিকশিল্পটা মূলত গ্যাসনির্ভর। চলমান গ্যাসসংকটে প্রতিটি সিরামিক কম্পানি লোকসান দিচ্ছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এতে স্থানীয় বাজারে সরবরাহের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। সঠিক সময়ে পণ্য দিতে না পারায় বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো ক্রয়াদেশ বাতিল করছে।
সিরাজুল ইসলাম মোল্লা আরো বলেন, টানা কয়েক মাস গ্যাসের তীব্র সংকট থাকলেও গত মাসের (অক্টোবর) মাঝামাঝি সময় থেকে কিছু কারখানায় গ্যাসসংকট কমেছে। তবে এখনো বেশির ভাগ কারখানায় গ্যাসসংকটের কারণে অর্ধেক উৎপাদন করতে হচ্ছে।