গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ৩২৩ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। দ্বিতীয় শেয়ারবাজার সিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে মাত্র সোয়া ১৩ কোটি টাকার শেয়ার। ঢাকার শেয়ারবাজারের লেনদেন গত বছরের ২৪ অক্টোবর বা গত প্রায় ২০ মাসের সর্বনিম্ন। ওই দিন ৩৩৪ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল।
অনিশ্চয়তা ভর করেছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনের অস্থিরতা তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবসা ও মুনাফায় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কিনা, সে হিসাব কষছেন তাঁরা। অন্যদিকে, বেশিরভাগ কোম্পানির দাম ফ্লোর প্রাইসে নেমে আসায় সেগুলোর লেনদেন হচ্ছে না বললেই চলে। এমন প্রেক্ষাপটে শেয়ার লেনদেন সাম্প্রতিক সময়ের সর্বনিল্ফেম্ন নেমেছে।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০ সালের ৭ জুলাই থেকে যখন একটু একটু করে শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল, তার পরের ৫৮১ কার্যদিবসের লেনদেনের মধ্যে গতকালের লেনদেন ছিল ১১তম সর্বনিম্ন। গত এক বছরে এ নিয়ে তিন দিন লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার ঘরে নামল। যদিও মাত্র ১২ কার্যদিবস আগেও ৮ নভেম্বর এ বাজারের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল।
এ অবস্থার কারণ জানতে চাইলে ডিএসইর ব্রোকারদের সংগঠন ডিবিএ সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও সমকালকে বলেন, অনেক কারণ আছে। অর্থনীতি ও রাজনীতি নিয়ে শঙ্কা তো আছেই। এর চেয়েও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফ্লোর প্রাইস। এ মুহূর্তে বাজারের ৭৬ শতাংশ শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে। এমন দুই শতাধিক শেয়ারের লেনদেন নেই বললেই চলে। যে শেয়ারই ফ্লোর প্রাইসে নেমেছে, তার লেনদেন শূন্য বা শূন্যের পর্যায়ে নেমেছে। এটাই লেনদেন কমার কারণ।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অবশ্য বলছে, এখনই সংস্থাটি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে না। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনছেন না কেন- এমন প্রশ্নে ডিবিএ সভাপতি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। তার সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় সব কোম্পানির উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ফলে কোম্পানির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহের সংকটে অনেক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে মুনাফা কমার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমান দরে অনেক বিনিয়োগকারী হয়তো শেয়ার কেনার সাহস করছেন না। হয়তো ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে কম দামে অনেকে শেয়ার কিনতেন। কিন্তু সে সুযোগ নেই। আবার এসব শেয়ারে যাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের বিনিয়োগ আটকে গেছে। এভাবেই লেনদেন কমছে।
বিভিন্ন ব্রোকারেজের কর্মকর্তারা ডিবিএ সভাপতির এ বক্তব্যকে সমর্থন করে জানান, যখন তিন-চতুর্থাংশের বেশি শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে নেমে এসেছে, তখন বাকি শেয়ারও একই অবস্থায় পড়তে পারে- এমন শঙ্কা থেকে ফ্লোর প্রাইসের ওপরে থাকা শেয়ারগুলোর লেনদেন কমেছে। ফলে এগুলোর শেয়ারের দরপতন হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের লেনদেন পর্যালোচনায় ব্রোকারদের পর্যবেক্ষণের সত্যতা মিলেছে। তালিকাভুক্ত ৩৯০ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে মাত্র ৩০০টির কেনাবেচা হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে এজিএম-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেটের কারণে ২৯ কোম্পানির লেনদেন বন্ধ ছিল। বাকি ৬১ কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের এমনিতেই কোনো লেনদেন হয়নি।
একই সঙ্গে বরাবরের মতো গুটিকয় শেয়ারে ভর করে লেনদেন চলছে। গতকাল ডিএসইতে ৩০০ শেয়ার কেনাবেচা হলেও এর মধ্যে লেনদেনের শীর্ষে থাকা জেনেক্স ইনফোসিসের প্রায় ২৫ কোটি টাকার বা মোটের পৌনে ৮ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের শীর্ষ পাঁচ শেয়ারের লেনদেন ছিল মোটের প্রায় ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া লেনদেনের শীর্ষে থাকা ২০ শেয়ারের ৬৯ শতাংশ, ৫০ শেয়ারের প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ১০০ শেয়ারের ৯৮ দশমিক ৬১ শতাংশ লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের নিচের দিকের ২০০ শেয়ারের কেনাবেচা ছিল মোটের ১ দশমিক ৩৯ শতাংশ বা মাত্র সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
লেনদেন বেশ খানিকটা কমলেও গতকাল ডিএসইতে ৪৬ শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৮টির দর কমেছে। অপরিবর্তিত ছিল ২২৬টির দর।
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭ পয়েন্ট বেড়ে ৬২১৫ পয়েন্টে উঠেছে।