শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:২৩ অপরাহ্ন

অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি

প্রতিনিধির / ৭৩ বার
আপডেট : রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৩
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারের তালিকা কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সীমিত আয়ের মানুষ ♦ করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব তো আছেই

বিদায়ি বছরই আলোচনার শীর্ষে ছিল নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। দেশের বাজারে চাল, আটা, চিনি, ভোজ্য তেল, ডাল, মসলাজাতীয় পণ্যসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। পণ্য কিনতে হয়েছে চড়া মূল্যে। সীমিত আয়ের মানুষের জন্য এটি চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাজারের তালিকা কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খেয়েছে সীমিত আয়ের মানুষ। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে চাল, ভোজ্য তেলসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দিয়েছে সরকার। তার পরও বছরজুড়ে বাজারদরে নাভিশ্বাস ছিল ভোক্তার। সব মিলিয়ে দেশের মানুষকে বছরজুড়ে ভুগিয়েছে নিত্যপণ্যের দর। নতুন বছরে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাই বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূল্যস্ফীতি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে। জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্যে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে উৎপাদন ও সেবা খাতের ব্যয়। উভয় খাতের বাড়তি ব্যয় উসকে দিয়েছে মূল্যস্ফীতিকে। শুধু বাংলাদেশই নয়, সমগ্র বিশ্বই এখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির সামনে আছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও টিসিবির বাজারদরের তথ্য মতে, বিদায়ি বছর দেশের মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য চালের দর ভোক্তাদের বেশ বিপাকে ফেলে। সরকার ব্যবসায়ীদের শুল্ক সুবিধায় চাল আমদানির সুযোগ দেয়, তার পরও কমেনি চালের দাম। গত এক বছরে বাজারে মোটা চাল ব্রি-২৮-এর দাম বেড়েছে ৪৪.৪৪ শতাংশ। এক বছর আগে মোটা চাল বিক্রি হয় কেজি ৪৫ টাকায়, সেটি দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়।

বিদায়ি বছরে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে আটার। চালের চেয়ে আটার দাম বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষজন এখন আটা খাওয়া বাদ দিয়েছে। এক বছরে খোলা আটা ৩৪ টাকা থেকে বেড়ে ৬৫ টাকা হয়েছে। এক বছরেই খোলা আটার দাম বেড়েছে ৯১.১৭ শতাংশ। প্যাকেট আটার দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়।

বিদায়ি বছরে কয়েক দফায় বেড়েছে ভোজ্য তেলের দাম। বছরের মাঝামাঝিতে দেশে ভোজ্য তেলের সংকটও ছিল। বাজার ঘুরে ক্রেতারা চাহিদামতো তেল কিনতে পারেনি। এক বছরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২৬.৬৬ শতাংশ। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৫০ টাকা, এক বছরের ব্যবধানে দাম বেড়ে সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।

গত সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ দেশের চিনির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। বাজারে দেখা দেয় সংকট। এই সুযোগে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই দুই দফায় দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তার পরও কাটছেই না চিনির সংকট। নতুন দাম অনুযায়ী, খোলা চিনি ১০২ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ১০৭ টাকা করে বিজ্ঞপ্তি দেয় দেশের চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বাজারে খোলা চিনি এখনো সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৩ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্যাকেট চিনির সরবরাহ খুবই কম। গত এক বছরে খোলা চিনি কেজি ৭৫ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়েছে ৬০ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে মসলার দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট ও এলসি খুলতে না পারার কারণে কমেছে আমদানি, বেড়েছে দাম। গত এক বছরে জিরার দাম বেড়েছে ৭৮.১২ শতাংশ। এক বছর আগে জিরা কেজি ছিল ৩২০ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৭০ টাকায়। একইভাবে অন্যান্য মসলার দামও বেড়ে বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন ধরনের ডাল থাকলেও দেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো মসুর ডাল। মানবদেহে আমিষের অভাব পূরণ করে থাকে এই ডাল। এই মসুর ডাল খুচরা পর্যায়ে এক বছরে ৩৩.৩৩ শতাংশ দাম বেড়েছে। মসুর ডালের কেজি ১০৫ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০ টাকা হয়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে ডালও।

পোলট্রি খাদ্যের দাম ও জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বছরের মাঝামাঝিতে মুরগি ও ডিমের দাম বেড়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে যায়। ব্রয়লার মুরগির কেজি হয়ে যায় প্রায় ২০০ টাকা ও সোনালি মুরগি কেজি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় উঠে যায়। পাশাপাশি মুরগির ডিমেরও রেকর্ড দাম বৃদ্ধি পায়। ডজন হয়ে যায় ১৬০ টাকা।

বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অসৎ ব্যবসায়ীরা কারচুপির মাধ্যমে ডিম ও মুরগির দাম বাড়িয়েছেন বলে প্রমাণ পায় সংস্থাটি। কারসাজির অভিযোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হয়। পরবর্তী সময়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানের খবরে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ডিমের ডজন ১৬৫ থেকে ১৩০ টাকায় চলে আসে।

পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘ সময় বন্যার কারণে প্রায় পুরো বছরই ক্রেতার নাগালের বাইরে ছিল সবজির দাম। বেগুনের কেজি ১০০ টাকায় উঠেছিল। নভেম্বর থেকে শীতের সবজি বাজারে আসার কারণে কমতে থাকে সব ধরনের সবজির দাম। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে হওয়ায় দেশে সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। যার কারণে রাজধানীর বাজারে সব ধরনের সবজি ক্রেতার নাগালের মধ্যেই রয়েছে। কেজি ৪০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যেই প্রায় সব ধরনের সবজি কিনতে পারছেন ভোক্তারা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ