মাদারীপুর সদর উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।শনিবার দুপুরে উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়ায় এই সংঘের্ষর ঘটনা ঘটে বলে মাদারীপুর থানার ওসি মনোয়ার হোসেন চৌধুরী জানান।
নিহত কামাল মাতুব্বর (৫০) একই এলাকার সলেমান মাতুব্বরের ছেলে। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।ওসি মনোয়ার বলেন, পেয়ারপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের সঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যান লাভলু তালুকদারের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব। শুক্রবার মাসুদ নামে এক ইউপি সদস্যকে থাপ্পড় দেওয়াকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
“হামলায় এক নিরীহ ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়েছে। আমরা গাছবাড়িয়া এলাকায় অবস্থান করছি। আপতত পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।”সংঘর্ষে আহত অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন; ফের সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা রয়েছে বলে জানান ওসি।
মাদারীপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রুবায়েত ইবনে হাবীব জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই কামালের মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে রয়েছে।এদিকে মৃত্যুর খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান বর্তমান চেয়ারম্যান লাভলু তালুকদার।সেখানে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “যারে কুপিয়ে মারা হইছে সে আমার লোক। আমার নির্বাচন করেছে। আমাকে ভোট দিয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর আমার ওপর ক্ষুব্দ হয়ে ওই নিরীহ লোকটারে মাইরা ফালাইলো।
“আজ মজিবুর, মোসলেমসহ কয়েজন মিলে আমার লোকদের টার্গেট করে হামলা চালায়। এ ঘটনার একটা সমাধান হতে হবে।”অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, “আমার নামে অভিযোগ দিলেই তো হবে না। এখানে মাইকিং করে সোহরাব বেপারী হামলা চালায়। সোহরাব তার লোকজন নিয়ে নিরীহ লোকটারে (কামাল মাতুব্বর) কুপিয়ে গেছে। যার ভিডিও আমার কাছে আছে।”
“সোহরাব এক সময় লাভলুর লোক ছিল। এখন কার লোক বলতে পারবো না। তবে এখানে আমার কোনো লোক জড়িত নয়।”বিষয়টি নিয়ে সোহরাব বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।এদিকে কামালের স্ত্রী শাহিনুর বেগমকে হাসপাতালে আহাজারি করতে দেখা যায়।হামলাকারীর বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমার স্বামী সকাল থেকেই ঘরে। বাইরে একটা গ্যাঞ্জাম দেইখা বাইরে যায় নাই।
“ওরা হামলা করতে আইলে আমার স্বামী ওদের সরাতে গেলে তাকে কোপানো শুরু করে। আমার স্বামীরে ওরা মাইরা ফালাইলো। হামলাকারীগো কারো নাম আমি বলতে পারি না। তবে ওরা সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুরের লোক। ওরা আমার স্বামীরে ক্যান মারলো?”কামালের বোন কোমেলা বেগম বলেন, “ভাইজান কোনো গ্যাঞ্জামে ছিল না। শীত বেশি দ্যাইখা ঘর থেকে আইজ কামে যায় নাই। আমার নিরপরাধ ভাইরে মাইরা ফালাইলো। ভাইজানের তো কোনো দোষ ছিল না। যারা আমার ভাইরে কোপাইয়া মারছে তাগোর বিচার চাই।”
পুলিশ ও স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমানের দীর্ঘদিনের বিরোধ। শুক্রবার বিকালে একই ইউপির সদস্য মাসুদ আকন গাছবাড়িয়া এলাকায় গেলে তাকে থাপ্পড় দেয় মজিবুরের সমর্থকরা। এর জেরে শনিবার সকালে দুপক্ষের লোকজন দেশি অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়।এ সময় ১০টি বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় বলে জানায় পুলিশ। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।