শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

ক্যাটামিন ‘রেফ ড্রাগ’ ভয়ংকর নতুন নেশা

প্রতিনিধির / ৫৮ বার
আপডেট : বুধবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৩
ক্যাটামিন ‘রেফ ড্রাগ’ ভয়ংকর নতুন নেশা
ক্যাটামিন ‘রেফ ড্রাগ’ ভয়ংকর নতুন নেশা

রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও বারিধারায় মাদকের সহজলভ্যতা রোধ করা যাচ্ছে না। হাতের নাগালে মাদক পেয়ে অভিজাত শ্রেণির সন্তানরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের কাছে নেশা করা রীতিমতো মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতীক।পরিচিত মাদকের পাশাপাশি তারা অপরিচিত বিদেশি মাদকে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে, নিয়মিত মাদকসেবনের আসর বসাচ্ছে।

বর্তমানে তারা নতুন মাদক ক্যাটামিন ‘রেফ ড্রাগ’ বা ‘ক্লাব ড্রাগ’-এ আসক্ত হয়ে পড়ছে। ইয়াবাসদৃশ নেশাজাতীয় পাউডার ক্যাটামিন ‘রেফ ড্রাগ’ সেবন করিয়ে তরুণীদের সম্ভ্রমহানি করা হচ্ছে। তবে মাদকটি দামি হওয়ায় অভিজাত পরিবারের সন্তানরা ছাড়া অন্যরা খুব একটা ব্যবহার করতে পারছে না।ভয়ংকর মাদক ক্যাটামিনের সন্ধান : সম্প্রতি বনানীতে অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সৈয়দ নওশাদ নামে এক যুবককে গ্রেফতারের পর ক্যাটামিন দিয়ে তৈরি ভয়ংকর মাদক ‘রেফ ড্রাগ’ সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেন।

গুলশান-বনানীসহ অভিজাত এলাকার পার্টিতে আসা টার্গেট তরুণীদের অজান্তে এ মাদকসেবন করিয়ে তাদের সম্ভ্রমহানি করা হতো। কর্মকর্তারা জানান, নওশাদের বাবা একজন ধণাঢ্য ব্যবসায়ী। কলেজে পড়ার সময় থেকে নওশাদ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। নিরুপায় হয়ে তাকে কয়েক মাস মাদক নিরাময়কেন্দ্রে রেখে কিছুটা সুস্থ করে মালয়েশিয়ায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয় পরিবার।কিন্তু সেখানে গিয়ে পড়াশোনা না করে নওশাদ ক্যাটামিনকে মাদক হিসাবে রূপান্তরের কৌশল শিখে নেয়। চেতনানাশক ইঞ্জেকশন ক্যাটামিন দিয়ে মাদক ‘রেফ ড্রাগ’ তৈরি করা হয়। এটি ইয়াবাসদৃশ নেশাজাতীয় পাউডার। অতিরিক্ত সুখ খুঁজতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা নাচগানের সময় ‘রেফ ড্রাগ’ ব্যবহার করে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরে এক যুগ ধরে নিজের বাসায় মাদক তৈরি ও বিক্রি করে আসছিল সৈয়দ নওশাদ। প্রতি গ্রাম ক্যাটামিন ২০-২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। আইনজীবীকে বিয়ে করেছিলেন নওশাদ।কিন্তু তার মাদকের কারণে সংসার টেকেনি। মতিঝিলের একটি প্রতিষ্ঠানে উচ্চ বেতনে চাকরি করার দাবি নওশাদ করলেও তার বাবা জানিয়েছেন, নওশাদ কিছুই করে না। কয়েক বছর আগে মাদক নিরাময়কেন্দ্রে তাকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক কর্মকর্তা দুলাল কৃষ্ণ সাহা  বলেন, মাদক ক্যাটামিন কেউ সেবন করলে সে অনেকটা কল্পনার জগতে চলে যায়। এটি সেবনের পর অনেকের স্বাভাবিক জ্ঞান থাকে না। তখন তাদের সঙ্গে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। কৌশলে এ মাদকসেবন করিয়ে তরুণীদের ধর্ষণ করার ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন, মূলত কোমল পানীয়র সঙ্গে পাউডারজাতীয় মাদকটি মিশিয়ে সেবন করালে বোঝা যায় না। কারণ এর কোনো আকার, ঘ্রাণ বা রং নেই। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এ মাদক ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। ১৯৭০ সাল থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় এটি খুবই জনপ্রিয়। লন্ডন শহরকে ক্যাটামিনের স্বর্গরাজ্য বলা হয়। সেখানে এটি ‘রেফ ড্রাগ’ বা ‘ক্লাব ড্রাগ’ নামে পরিচিত।এ মাদক বাংলাদেশের মাদকসেবীরা গ্রহণ করছে-এমন তথ্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে ছিল না। তবে নওশাদকে গ্রেফতারের পর অভিজাত এলাকার বিভিন্ন পার্টিতে এ মাদক ব্যবহারের তথ্য পাওয়া যায়। এর আগে ক্যাটামিনের একটি চালান ধরা পড়ার কথা জানা যায়। সেটি বিদেশে পাচার করা হচ্ছিল। এবার দেশে ক্যাটামিন মাদক হিসাবে ব্যবহারের তথ্য পাওয়া গেছে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ইউরোপে এ মাদকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে সেখানে এটা সহজলভ্য নয়। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে বিশেষ কৌশলে তরল ক্যাটামিন পাচার করেছেন মাদক কারবারিরা। এর আগে ২০১৭ সালে ঢাকার মিরপুর থেকে আন্তর্জাতিক মাদকচক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছিল র‌্যাব। তখন র‌্যাব জানিয়েছিল, নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় তরল ক্যাটামিন তোয়ালে মেশানো হতো। সেটি দেখে কেউ বুঝতে পারত না ক্যাটামিন রয়েছে। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বিদেশে পাচারের পর তোয়ালে থেকে বিশেষ কৌশলে তা আবার তরল কেটামিনে রূপান্তর করা হতো।

যত মাদক : জানা যায়, পৃথিবীতে যত মাদক পাওয়া যায়, সেগুলোকে চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এগুলো হলো-অপিয়ডস বা ঘুম-অবসাদ উৎপাদনকারী, স্টিমুল্যান্টস বা উত্তেজক, সিডেটিভ-হিপনোটিক ট্রাঙ্কুলাইজার এবং হ্যালুসিনেশনস বা মনোবৈকল্য-বিভ্রম সৃষ্টিকারী মাদক। বাংলাদেশে গাঁজা বা ক্যানাবিসের ব্যবহার পুরোনো।১৯৮৮ সালে গাঁজা নিষিদ্ধ হওয়ার পর মাদকের বাজার দখল করে নেয় অপিয়ডস বা ঘুম-অবসাদ উৎপাদনকারী মাদক হেরোইন, ফেনসিডিল। এরপর বাজারে আসে স্টিমুল্যান্টস বা উত্তেজক মাদক ইয়াবা। বর্তমান সময়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ মাদকের অনুপ্রবেশ মাদক পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছে। একসময় বহুল ব্যবহৃত মাদক কোকেন, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবা, গাঁজার পাশাপাশি অভিজাত শ্রেণির বখে যাওয়া সন্তানরা মাদক এলএসডি, ব্রাউনি (গাঁজার কেক), ক্রিস্টাল মেথ (আইস), এমডিএমএ, অক্সি-মরফোন, ডিওবি, খাট (ক্যাথিন), ম্যাজিক মাশরুম, কুশ, এক্সট্যাসি, হেম্প, মলির দিকে ঝুঁকে পড়ে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ