শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন

আমনের উৎপাদনে মৌসুমে সর্বোচ্চ রেকর্ড,তবু চড়া চালের বাজার

প্রতিনিধির / ১০৩ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২৩
আমনের উৎপাদনে মৌসুমে সর্বোচ্চ রেকর্ড,তবু চড়া চালের বাজার
আমনের উৎপাদনে মৌসুমে সর্বোচ্চ রেকর্ড,তবু চড়া চালের বাজার

আমনের উৎপাদনে এবারের মৌসুমে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ টনের বেশি চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ছয় লাখ টন বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) প্রাথমিক হিসাবে এই তথ্য উঠে এসেছে। তবে আমনের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদনের পরও চালের দাম তেমন কমেনি।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আমন মৌসুমে ৫৯ লাখ ছয় হাজার হেক্টর জমিতে এক কোটি ৬৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬০০ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবে আবাদ করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এতে মোট উৎপাদন হয়েছে এক কোটি ৬৯ লাখ ৩০ হাজার ৬০০ টন চাল, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার টন বেশি। গড়ে প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ২.৮৭ টন।

যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক কৃষিসেবা বিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএর গত সপ্তাহের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে শেষ হওয়া আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন বেড়েছে। এবারের আমন মৌসুমে উৎপাদনে প্রধান শঙ্কা ছিল ঘূর্ণিঝড়। এ ছাড়া ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে কৃষকের ধান আবাদে উৎসাহে ভাটা পড়ার শঙ্কাও ছিল। তবে সেই ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি হয়নি বলে ডিএইর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ছাড়া আমনের পুরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। গত বছর ধানের ভালো দাম পাওয়ার কারণে কৃষকের আমন ধান চাষে আগ্রহ বেশি ছিল। ফলে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় কাছাকাছি জমিতে আমনের আবাদ সম্ভব হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক গতকাল বলেন, শঙ্কা কাটিয়ে আমনে এযাবৎকালের রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটার পেছনে কৃষকের নিরলস প্রচেষ্টা আর সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ অবদান রেখেছে। মৌসুমের শুরুতেই কৃষকের প্রচণ্ড আগ্রহের কারণে আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। তা ছাড়া অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এবারে আমনে চিটা কম হয়েছে, যার কারণে হেক্টরপ্রতি ফলন ভালো পেয়েছেন দেশের কৃষক। তেমনি প্রকৃতি বেশ সহায়ক ছিল।কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ধানের মৌসুমে প্রায় সাত লাখ সেচযন্ত্র সচল রাখা হয়েছিল। উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত ও কৃষি উপকরণ আমরা কৃষকের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তারা ধানের দামও ভালো পেয়েছে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় আমনের বাম্পার ফলন সামনের বোরো মৌসুমে কৃষকদের উৎসাহিত করবে।’

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার তালতলা গ্রামের কৃষক মো. শিপন মোল্লা  বলেন, ‘গত বছর আট বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছিলাম। ভালো দামের আশায় দুই বিঘা জমিতে বেশি আবাদ করেছিলাম। ফলন ভালো পেয়েছি। প্রায় ৩৫০ মণ ধান পেয়েছি। কিন্তু ঋণের চাপ কমাতে মৌসুমের শুরুতে ধান বিক্রি করেছি। ধরে রাখতে পারলে এখন প্রতি মণে এক-দেড় শ টাকা বেশি পেতাম।’ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের মহেশালি গ্রামের কৃষক রাখাল চন্দ্র রায় বলেন, তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে এবার আমনের আবাদ করেন। প্রতি বিঘায় ১৮ হাজার টাকা করে তাঁর ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় ২৮ মণ করে পাঁচ বিঘায় তিনি ১৪০ মণ ধান পেয়েছেন। বাজারে প্রতি মণ ধান এক হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৫৭ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন ছিল এক কোটি ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার টন। ফলে ডিএইর প্রাথমিক উৎপাদনের তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হলে উৎপাদন বাড়বে ১৯ লাখ ৭২ হাজার টন।

এবারের আমন মৌসুমে চালের উৎপাদন বেশি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান (ব্রি)। গত আমন মৌসুমে চাষের জন্য বেশ কিছু সময় আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। আমন মৌসুমে আবহাওয়ার উপাদান, বিশেষ করে পরিষ্কার সূর্যালোক, সৌর বিকিরণ, গড় তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আর্দ্রতা ও মেঘমুক্ত আকাশ এবং এসবের ইতিবাচক প্রভাব আমনের ভালো ফলনের জন্য অবদান রেখেছে।

ব্রি মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, চলতি বছর আমন ধানের বাম্পার ফলনের দুটি কারণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি আবহাওয়া, বিশেষ করে তাপমাত্রা ও সূর্যালোকের প্রভাব। অন্যটি বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় অনেক নিচু জমি আমন চাষের আওতায় এসেছে। ২০২১ সালের তুলনায় আমনের ফলন প্রায় ৭ শতাংশ বেশি হয়েছে। আমনের বাড়তি ফলনের কারণে দেশে আগামী জুন পর্যন্ত চালের কোনো সংকট হবে না।

আমনের বাড়তি উৎপাদনেও দাম কমছে না

ইউএসডিএ ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, আমন মৌসুমে বাড়তি চালের উৎপাদন হলেও তার প্রভাব বাজারে খুব কম। দেশের বাজারে চালের গড় দাম ৫২ টাকার মধ্যে রয়েছে। যদিও ডিসেম্বর মাসের শুরুতে গড় দাম ৫৫ টাকায় উঠেছিল। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশের বাজারে চালের গড় দাম ছিল ৪৫ টাকার মধ্যে। ফলে চলতি বছরে এখনো বাজারে চালের দাম বেশি রয়েছে।চলতি সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে চালের মান ভেদে দাম ৫২ থেকে ৭৫ টাকায় ওঠানামা করছে। এর মধ্যে মাঝারি মানের (পাইজাম ও লতা) চাল প্রতি কেজি ৫২ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ