বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৩২ পূর্বাহ্ন

এখনই ভারতীয় চিনি আমদানি সম্ভব না

প্রতিনিধির / ৭২ বার
আপডেট : সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
এখনই ভারতীয় চিনি আমদানি সম্ভব না
এখনই ভারতীয় চিনি আমদানি সম্ভব না

সম্প্রতি বাংলাদেশের বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। সে সঙ্গে বাজারে সরবরাহও কমে গেছে।প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। এ অবস্থায় ভারত থেকে চিনি আমদানির দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে, ভারত সরকারের চিনি রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা, এবং মূল্য সংক্রান্ত জটিলতার কারণে এখনই চিনি আমদানি করতে পারছেন না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

এর আগে, রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ‘আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়ী নেতারা জানান, রমজান ছাড়া মাসিক চাহিদা দেড় লাখ মেট্রিক টন, রমজানে তা দাঁড়ায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। এজন্য অপরিশোধিত চিনি আমদানির অনুরোধ জানান তারা।

এদিকে, দেশের বাজার থেকে প্যাকেটজাত চিনি প্রায় উধাও বললেই চলে। এছাড়া, খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে। খোলা চিনির সরকার নির্ধারিত দাম কেজি প্রতি ১০৭ টাকা হলেও বাজারে ১২০-১২৫ টাকা দরে চিনি বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত চিনির সরকার নির্ধারিত দাম কেজি প্রতি ১১২ টাকা হলেও সেটিও ১২৫-১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট সংকটের কারণে গত বছরের জুলাই–আগস্ট থেকে চিনির বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সরকার প্রথমবারের মতো চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয়। পরবর্তীতে, আরও দুই দফায় চিনির দাম বাড়ায় সরকার। সংকট কাটাতে বাজারগুলোতে চালানো হয় অভিযান। তবে, এত কিছুর পরও সংকট কাটেনি চিনির বাজারে। সর্বশেষে গত জানুয়ারি মাসে খুচরা পর্যায়ে চিনির দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চিনিকলগুলোতে প্রায় ২১ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে, যা গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ টন চিনি উৎপাদিত হয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরের উৎপাদন ছিল ৪৮ হাজার টন এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ৮২ হাজার টন।এ অবস্থায় ভারত থেকে চিনি আমদানি করতে ব্যবসায়ীদের যে চাওয়া, তা শিগগিরই পূরণ হচ্ছে না। এর পেছনে এলসি (ঋণপত্র) খোলার প্রক্রিয়া সহজ না হওয়া এবং ভারত সরকারের রফতানি নিষেধাজ্ঞা অন্যতম কারণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক সংবাদে বলা হয়েছে, চিনি রফতানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও এক বছরের জন্য চালু রেখেছে সে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার। গত বছর (২০২২) মে মাসে চালু হওয়া এ নিয়ন্ত্রণ চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত জারি থাকার ঘোষণা করেছিল ভারত সরকার। এরপর, এক বিজ্ঞপ্তিতে সে নিয়ন্ত্রণের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জারি রাখা হয়েছে।

খবরে বলা হয়েছে, গত মে মাসে চিনিকলগুলো রেকর্ড পরিমাণ পণ্য রফতানি করে। তার প্রভাবে সে দেশের বাজারেও চিনির দাম করে বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সে দেশের খাদ্যমন্ত্রণালয় রফতানির পরিমাণকে এক কোটি টনে বেঁধে দেয়। শুধু তাই নয়, সরকারি অনুমোদন ছাড়া এক দানা চিনিও রফতানি করা যাবে না বলে সে নিষেধাজ্ঞায় জানিয়ে দেওয়া হয়।খাদ্যমন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘ডাইরেক্টরেট অব সুগার’ এ সিদ্ধান্তকে কার্যকর করছে। রফতানির জন্য এ ডাইরেক্টরেটেরই অনুমোদন প্রয়োজন হয়।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে রেকর্ড চিনি উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে ভারতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও দেশের বাজারে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ নিষেধাজ্ঞা ২০২৩ সালের পরেও চালু রাখতে পারে সরকার।এনএসও-র তথ্য অনুযায়ী ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত উত্তর ভারতে আখের উৎপাদন দামের হিসাবে ৪২ শতাংশ বাড়লেও, দক্ষিণ ভারতে তা ৩২.৪ শতাংশ পড়েছে। চিনি যেহেতু আখ থেকেই তৈরি হয়, তাই আখের উৎপাদন বাড়লে চিনির উৎপাদন বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি হয়। চিনিকলগুলোর ধারণা আগামী মৌসুমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানির জন্য ৮০ লাখ টনের মতো চিনি উদ্বৃত্ত হবে।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি মো. আবুল হাশেম বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। মূল সমস্যা হচ্ছে দুটি। একটি হচ্ছে ডলার সংকট আরেকটি হচ্ছে আমাদের যে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন আছে, তাদের আপত্তি। তাদের আপত্তির জায়গাটা হচ্ছে প্রতি মেট্রিক টনে ৪৭০ ডলার করে আমদানি না করে ৫৩০ ডলার করে আমদানি করার কথা বলছেন তারা। এটা হলে দাম কাঙ্ক্ষিত দামের তুলনায় বেড়ে যাবে।

তিনি বলেন, সরকারের যে বর্তমানে শুল্ক কাঠামো আছে, সেটা অনুযায়ী ভারত থেকে চিনি আমদানি করলে মূল্য কম পড়বে। সেটা হলে ৯০ টাকা বা তার কম পড়বে প্রতি কেজি চিনি। যদি, সরকার যদি টোটাল কর হারটা পরিবর্তন করে (৩২ টাকা প্রায়) কিছু ছাড় দিয়ে শোধিত চিনি আমদানি করতে দেয়, তাহলে বাজারে চাহিদা বনাম সরবরাহের যে ঘাটতি আছে, সেটি পূরণ হয়ে যাবে। পাশাপাশি মিল মালিকরা রিফাইনার্স থেকে যে পরিমাণ চিনি পায়, সেটা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয় ফলে, অন্য উৎস থেকে চিনি আনতে পারলে বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মফিজুল হকের একাধিকবার যোগাযোগ করলেও সাড়া মেলেনি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ