সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

যেভাবে এলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

প্রতিনিধির / ৭৯ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
যেভাবে এলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস
যেভাবে এলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস

আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালিত হয় এ দিবসটি। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় দিবসটি। এ দিনে পার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলো ভালোবাসার মানুষে পরিপূর্ণ থাকে।ভালোবাসা দিবসের এ দিনে প্রিয়জনকে সবাই ফুল ও বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে থাকে। কিন্তু কী কারণে সারা বিশ্বের মানুষ এ দিনটিকে মহাসমারোহে পালন করে তা নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এর ইতিহাস নিয়েও রয়েছে বিভক্তি। কীভাবে এলো ভালোবাসা দিবস দেখে আসা যাক।

ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস। দিনটি মূলত সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবস। যাকে ভালোবাসা দিবস নামে আখ্যা দেওয়া হয়। তবে দিবসটির পেছনে জড়িয়ে আছে একজন মানুষ। তার নাম সেইন্ট ভ্যালেনটাইন।

ঘটনাটি ১৭৫৪ বছর পুরনো। ২৬৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয়েছিল সেইন্ট ভ্যালেনটাইনকে। দিনটি মূলত তার মৃত্যুবার্ষিকী। ভ্যালেন্টাইন ছিলেন তৎকালীন রোম সাম্রাজ্যের একজন খ্রিস্টান পাদ্রি ও চিকিৎসক৷ ধর্ম প্রচারের অভিযোগে তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস তাকে বন্দি করেন। কারণ তখন রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। বন্দি অবস্থায় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন এক কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। তাই তার প্রতি ইর্ষান্বিত হয়ে রাজা তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।

৪৯৬ সালে পোপ সেন্ট জেলাসিউও প্রথম জুলিয়াস ভ্যালেন্টাইন স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস ঘোষণা করেন।

খ্রিস্টীয় এই ভ্যালেন্টাইন দিবসের চেতনা বিনষ্ট হওয়ায় ১৭৭৬ সালে ফ্রান্স সরকার কর্তৃক ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করা হয়। ইংল্যান্ডে ক্ষমতাসীন পিউরিটানরাও একসময় প্রশাসনিকভাবে এ দিবস উদযাপন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এ ছাড়া অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও জার্মানিতে বিভিন্ন সময়ে এ দিবস প্রত্যাখ্যাত হয়। পাকিস্তানে ২০১৭ সালে ইসলামবিরোধী হওয়ায় ভ্যালেন্টাইন উৎসব নিষিদ্ধ করেন সে দেশের আদালত।

বর্তমানে পাশ্চাত্যে এ উৎসব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকোলেটসহ অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করতে এবং আনুমানিক প্রায় আড়াই কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।

আবার কারও মতে, রোমের সম্রাট ক্লডিয়াস ২০০ খ্রিস্টাব্দে দেশে বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধ করেন। তিনি ঘোষণা দেন, আজ থেকে কোনো যুবক বিয়ে করতে পারবে না। যুবকদের জন্য শুধুই যুদ্ধ। তার মতে, যুবকরা যদি বিয়ে করে, তবে যুদ্ধ করবে কারা? সম্রাট ক্লডিয়াসের এ অন্যায় ঘোষণার প্রতিবাদ করেন এক যুবক। যার নাম ভ্যালেন্টাইন। অসীম সাহসী এ যুবকের প্রতিবাদে খেপে উঠেছিলেন সম্রাট। রাজদ্রোহের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা মাথা কেটে ফেলা হয় তার। ভালোবাসার জন্য ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করতে, তখন থেকেই এ দিনটিকে পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে। তবে এটিও সর্বজনস্বীকৃত নয়।

কারও মতে, প্রাচীন রোমে দেবতাদের রানি জুনোর সম্মানে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছুটি পালন করা হতো। রোমানরা বিশ্বাস করত যে, জুনোর ইশারা-ইঙ্গিত ছাড়া কোনো বিয়ে সফল হয় না। ছুটির পর দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি লুপারকালিয়া ভোজ উৎসবে হাজারও তরুণের মেলায় র্যাফেল ড্রর মাধ্যমে সঙ্গী বাছাই প্রক্রিয়া চলত।

ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস নিয়ে এমন অনেক প্রচলিত ঘটনা, তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়। একেকজন একেকভাবে এর যুক্তি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। তবে তাদের মধ্যে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুবার্ষিকীর দিন কেন্দ্র করেই দিবসটি এসেছে বেশি মত পাওয়া গেলেও সিংহভাগ মানুষই দিনটিকে ভালোবাসা দিবস হিসেবে জানেন। দিনটি কেন্দ্র করে বিশ্বের অনেক দেশেই চলে নানা আয়োজন।

বাংলাদেশে ‘ভালোবাসা দিবস’ উদযাপন চালু করেন সাংবাদিক শফিক রেহমান। ১৯৯৩ সালে তার সম্পাদিত যায়যায়দিন পত্রিকায় প্রথম এই দিনটিকে উপলক্ষ করে বিশেষ ‘ভালোবাসা সংখ্যা’ বের করেছিলেন তিনি। দিনে দিনে সে ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশে রূপ নিয়েছে রীতিমতো উৎসবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ