বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মন্দা থেকে বাঁচাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়ানোর কথা বলেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে দেশকে বৈশ্বিক মন্দা থেকে বাঁচাতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাড়াতে হবে। এজন্য বাড়াতে হবে রপ্তানি ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসে ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ‘ষষ্ঠ সমাবর্তন-২০২৩’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।এসময় রাষ্ট্রপতি তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তিতে হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে দক্ষতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই। প্রাথমিক থেকে উচ্চতর, সর্বত্রই বিজ্ঞান ও প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, সার্টিফিকেট-সর্বস্ব ও নোট মুখস্থ করার শিক্ষা নয়, বিশ্লেষণধর্মী ও প্রায়োগিক শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে।
সমাবর্তনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে ৩৬ স্নাতক ডিগ্রিধারীকে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ এবং আরও ২৯ জনকে ‘ভাইস চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয়।সমাবর্তন অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মানসম্পন্ন শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, এটি (মানসম্মত শিক্ষা) শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক বৃদ্ধি, অসাম্প্রদায়িক জীবনবোধ এবং সর্বোপরি গভীর দেশপ্রেম জাগরণের প্রধান মাধ্যম।
চাহিদাভিত্তিক ও কর্মমুখী শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপ্রধান। এসময় তিনি বিদ্যমান শ্রমবাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে শিক্ষা কারিকুলাম তৈরির তাগিদ দেন।এছাড়া তিনি বিইউপি কর্তৃপক্ষকে গবেষণা কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য শিক্ষকদের শিক্ষাদানে আন্তরিকতার সঙ্গে আত্মনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে, আনন্দ ছাড়া শিক্ষা কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে উদ্ভাবিত নতুন ধারণা এবং কৌশলগুলোকে আয়ত্ত করে আমাদের আপ-টু-ডেট রাখতে হবে।বিইউপি কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে চ্যান্সেলর বলেন, বিইউপির ভর্তি পরীক্ষা, অন্যান্য পরীক্ষা এবং এর ফলাফল ‘ইউনিভার্সিটি কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সিস্টেমে’র মাধ্যমে করা হচ্ছে।যুগের চাহিদা অনুযায়ী বিইউপি জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা প্রদানে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
স্নাতকদের অভিনন্দন জানিয়ে মো. আবদুল হামিদ বলেন, শিক্ষা কেবল ডিগ্রি অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, একজন স্নাতকের আসল সাফল্য নির্ভর করে কীভাবে ব্যক্তিগত, সামগ্রিক এবং পেশাগত জীবনে এর সুবিধা নিতে পারে তার ওপর।রাষ্ট্রপতি স্নাতকদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত হওয়ার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পরামর্শ দেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আজকের স্নাতকরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, সুখী, ধনী ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে জনগণের কল্যাণে কাজ করবেন।এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সংসদ সদস্য, বিইউপির উপাচার্য মেজর জেনারেল মো. মাহবুব-উল আলম, তিন বাহিনীর প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ এবং রেজিস্ট্রারসহ অন্যান্যরা।