শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন

পোশাক নকল করে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ মেলেনি

প্রতিনিধির / ২৩৯ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
পোশাক নকল করে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ মেলেনি
পোশাক নকল করে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ মেলেনি

আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পোশাক নকল করে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। শোনা কথার ওপর রহস্যজনক কারণে এ ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পেলে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সরকার নজরদারি আরও বাড়াবে। ইতোমধ্যেই পোশাক খাতের দুটি ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যদের এ বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দুটি সংগঠনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) চিঠির জবাবে এসব কথা জানিয়েছে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল।গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ) এবং ফ্রান্সের শ্রমিক ইউনিয়ন দেস ফাব্রিকান্তস (ইউএনআইএফএবি) ইউএসটিআরের কাছে আলাদা দুটি অভিযোগ জমা দেয়। তাদের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাকসহ কিছু পণ্য লোগোসহ হুবহু নকল করে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশকে ইউএসটিআরের বিশেষ নজরদারির তালিকায় রাখার দাবিও জানায় যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠনটি।

অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ‘স্পেশাল রিভিউ অন ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস’ নামে বিশেষ পর্যালোচনার উদ্যোগ নিয়েছে ইউএসটিআর। যুক্তরাষ্ট্রের এই দপ্তরটির মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ ও কার্যকরের দিকটিও দেখভাল করে। সম্প্রতি তারা এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠায়।এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েই চিঠির জবাব পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো জবাবে বলা হয়, এএএফএ অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশে নকল পণ্য ব্যাপক হারে উৎপাদন হচ্ছে। এসব পণ্য রপ্তানিও হচ্ছে। ২০২২ সালে সারা বিশ্বে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত ৫৬টি নকল পণ্যের চালান জব্দ হয়েছে, যা ২০২১ সালের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। জব্দ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশে। এমনকি মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় আইন নেই। কিন্তু এসব অভিযোগ সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়নি। তা ছাড়া মেধাস্বত্ব বাস্তবায়নে বাংলাদেশে অন্তত ১২টি আইন আছে। এর বাস্তবায়নও যথাযথভাবে হচ্ছে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, কোন কোন কোম্পানি নকল পণ্য রপ্তানি করে এ বিষয়ে ইউএসটিআর সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে সে ক্ষেত্রে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সরকার নজরদারি আরও বাড়াবে। দেশের আদালতেও যে কেউ এ বিষয়ে প্রতিকার চাইতে পারে। এখন পর্যন্ত অভিযোগকারী কোনো ব্র্যান্ড সেখানে পণ্য নকল বা জালিয়াতির মামলা করেনি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সদস্যদের আরও সতর্ক করতে বলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংগঠন এএএফএর অভিযোগে বলা হয়েছে, সবচেয়ে বেশি নকল পণ্য রপ্তানিকারক পাঁচ দেশের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। নকল জুতা, হাতব্যাগ ও গয়নার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ রয়েছে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের তালিকায়। চীন ও তুরস্কের পর বাংলাদেশ হলো নকল তৈরি পোশাকের বৃহত্তম উৎস। যথাযথ নীতি কাঠামোর অভাব রয়েছে। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শুধু পুলিশ ও র‌্যাব কাজ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনাগ্রহ এবং সর্বব্যাপী দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশে যথাযথ মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের কাজটি একপ্রকার অসম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, কোন গবেষণার ভিত্তিতে নকল পণ্যে বাংলাদেশকে শীর্ষ পঁ?াচে রাখা হয়েছে সে তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া দেশে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি আদালত, বাংলাদেশ কাস্টমস, বিএসটিআইসহ বিভিন্ন অফিসের মাধ্যমে মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে এলডিসি দেশ হওয়ায় তার পুরোটা বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি এখনও। পর্যায়ক্রমে পুরোটাই বাস্তবায়ন হবে। আগামী ২০২৬ সালের পর যেন এ বিষয়ে কোনো সমস্যা তৈরি না হয়, সে জন্য বাণিজ্যিক সংগঠনসহ সব পর্যায়ে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।

ফ্রান্সের ইউনিয়ন ইউএনআইএফএবি অভিযোগ করেছে, তাদের দেশের ক্রেতাদের দেওয়া ক্রয়াদেশে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক হুবহু নকল করে ভিন্ন দেশ ও ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা, যা মেধাস্বত্ব আইনের পরিপন্থি।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এ অভিযোগ পুরোপুরি অনুমাননির্ভর। অসৎ উদ্দেশ্যে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে এ খাতের বিষয়ে অভিযোগ করা হলেও সুনির্দিষ্ট একটি উদাহরণও দেওয়া হয়নি।জানতে চাইলে বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শহীদুলল্গাহ আজিম বলেন, এ ধরনের ঢালাও অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর কোনো সদস্য নকল পণ্য উৎপাদন ও তা রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত নয়। তার পরও এ বিষয়ে আরও স্বচ্ছতা আনতে ক্রেতা সম্পর্কিত তথ্য দিতে বলা হয়েছে সদস্যদের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ