বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৪ অপরাহ্ন

ডাকসু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে

প্রতিনিধির / ১৬০ বার
আপডেট : শনিবার, ১১ মার্চ, ২০২৩
ডাকসু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে
ডাকসু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে

দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ডাকসুর মেয়াদ এক বছর। এর মধ্যে নির্বাচন না হলে সংসদ পরবর্তী ৯০ দিন অতিরিক্ত দায়িত্ব দায়িত্ব পালন করবে। অথচ তিন বছর পার হলেও নির্বাচন হয়নি। এই অবস্থায় ডাকসু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিগগিরই আন্দোলনে যেতে চায় তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রসংগঠনগুলো বলছে, শুধু ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করলেই হবে না, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আবাসিক হলে নয় বরং একাডেমিক ভবনগুলোতে ভোট নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।ডাকসুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দ্বিমত না থাকলেও উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অনুকূল পরিবেশ না থাকাকে ডাকসু নির্বাচনের বড় প্রতিবন্ধকতা মনে করছেন। অবশ্য ডাকসু নির্বাচন না হওয়ার পেছনে প্রশাসনিক ব্যর্থতা আছে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আদনান তূর্য বলেন, ‘ডাকসু দরকার, কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দরকার, ছাত্রদের প্রতিনিধি দরকার। সাধারণ ইস্যুতে এখন ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের কাছে যাওয়া লাগে। ফলে একজন শিক্ষার্থীর অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। ছাত্র প্রতিনিধি থাকলে সাধারণ শিক্ষার্থীকে কোনো বিশেষ দলের ছাতার নিচে থাকতে হবে না। স্বাধীনভাবে সে থাকতে পারবে।’বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী সাদিক মাহবুব ইসলাম বলেন, ‘ডাকসু যেকোনো অবস্থাতেই একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফরম, যাকে উপেক্ষা করা প্রশাসনের জন্য কঠিন। ডাকসু নির্বাচন না হওয়াটা প্রশাসনের জন্য সুবিধাজনক। কারণ এতে জবাবদিহি করার বাধ্যবাধকতা থাকে না। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন দিতে ইচ্ছুক নয়।’

ঢাবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) সভাপতি রাজীব কান্তি রায় বলেন, ডাকসু নির্বাচন না হওয়া এক ধরনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সেই দায় এড়ানোর বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।ঢাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শিমুল কম্বুকার বলেন, নিয়মিত শিক্ষক, কর্মচারী এবং অন্যান্য প্রতিনিধি নির্বাচন হলেও ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গড়িমসি লক্ষ করা যায়। বছরের পর বছর যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছে প্রশাসন, তার প্রভাব শিক্ষাব্যবস্থার ওপর পড়ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে, শিক্ষার পরিবেশও আক্রান্ত হচ্ছে।

ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে শিগগিরই আন্দোলনে নামার কথা বলে জানিয়েছেন ঢাবি ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি) আহ্বায়ক আরমানুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্য ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করব।’ একই কথা জানিয়েছেন ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সাগর। তিনি বলেন, ‘ডাকসু ইস্যুতে এরই মধ্যে অপরাপর প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা শুরু করেছি। দাবি আদায়ে যুগপত্ রূপরেখার কাজ করছি। দ্রুতই এটা দৃশ্যমান হবে।’

ডাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের ভাবনা আছে ছাত্রলীগেরও। ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ‘এখনো আমাদের রাজপথে নেমে আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা নেই। তবে চলমান সংকট মোকাবেলার পর যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন না দেয় তাহলে আন্দোলনে নামব। আমাদের সঙ্গে আদর্শিক মিল রয়েছে যেসব ছাত্রসংগঠনের, যারা বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী তাদের সঙ্গে নিয়েও রাজপথে আন্দোলন করতে পারি।’ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আসিফ মাহমুদ বলেন, ডাকসু নির্বাচনসহ ক্যাম্পাসে চলমান ছাত্র নির্যাতনের বিরুদ্ধে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিটি ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনকে যুগপত্ভাবে কাজ করতে হবে।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘জাতীয় রাজনীতি অঙ্গনে ক্ষমতা দখলের জন্য অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে ব্যবহার করে, জাতীয় রাজনীতির প্রভাব যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবর্তন করবে তখন এখানকার পরিবেশ নষ্ট হবে। এটি এই মুহূর্তে ডাকসুর জন্য বড় একটি প্রতিবন্ধকতা, প্রতিকূলতা বা অনুকূল পরিবেশ না থাকা। এর মানে এই নয় যে অনুকূল পরিবেশের জন্য বসে থাকতে হবে। প্রতিকূল পরিবেশকে বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে অনুকূল করে নির্বাচন দেওয়াটাই হলো আসল কাজ। যতক্ষণ পর্যন্ত সমাজিক ডায়নামিকস ও ফ্যাক্টরগুলোর সঙ্গে সংহতি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ডাকসু নির্বাচন দেওয়া কঠিন।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ