মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ যত অভিযোগ

প্রতিনিধির / ৭৮ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩
ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ যত অভিযোগ
ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারসহ যত অভিযোগ

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ নিয়ে ৪০ বিশ্বনেতার খোলা চিঠি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলেছে। এই সূত্রে বেরিয়ে আসছে ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকমের আর্থিক দুর্নীতি ও পাচারের ভয়াল চিত্রও। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ড. ইউনূস সামাজিক ব্যবসার নামে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এখন সেই অর্থ থেকেই তিনি বিদেশে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজে লবিস্টের পেছনে ঢালছেন।

গ্রামীণ কল্যাণকে হাজার হাজার কোটি টাকা লভ্যাংশ দিচ্ছে গ্রামীণ টেলিকম। বাকি লভ্যাংশও নামে-বেনামে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর করা চলছে। কিন্তু এসব তথ্য গোপন করে গ্রামীণ টেলিকম লভ্যাংশ বণ্টন হয় না মর্মে বানোয়াট বার্ষিক রিটার্ন প্রদান করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কর্মকাণ্ড কোম্পানী আইনের-৩৯৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই শাস্তি হচ্ছে অনধিক পাঁচ বছর মেয়াদের কারাদণ্ড এবং তৎসহ অর্থদণ্ড।জানা যায়, দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যয় হবে এবং কম্পানির সদস্যদের মধ্যে কোনোরূপ লভ্যাংশ শেয়ার না করার শর্তেই গ্রামীণ টেলিকমকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। কোম্পানী আইনের ২৮ (১) এবং ২৯ (১) ধারায় কোন সদস্যকে বা ব্যক্তিকে কম্পানির বণ্টনযোগ্য মুনাফা লাভের অধিকার প্রদান না করার জন্য সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু ড. ইউনূস প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমের হাজার কোটি টাকার ওপর ডিভিডেন্ড সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কয়েক হাত ঘুরিয়ে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করে আত্মসাৎ করছেন।

১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছ থেকে গ্রামীণ টেলিকম তথা গ্রামীণফোনের লাইসেন্স গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার আগে তিনি সরকারের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই তিনি গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নিতে চাচ্ছেন। অঙ্গীকার করেছিলেন, কোনো মুনাফার জন্য নয়, বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সেবা প্রদানই হবে এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।ভুক্তভোগীরা বলছেন, তাদের স্বার্থের সুরক্ষার বদলে গ্রামীণফোনের অধিকাংশ শেয়ার বিদেশি কম্পানির হাতে তিনি তুলে দিয়েছেন। অনেকেই মনে করেন, এর বিনিময়েই পরবর্তী সময়ে ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা হিসেবে নিয়ে যাচ্ছে নরওয়েজিয়ান কম্পানি টেলিনর।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকম গ্রামীণফোন লিমিটেডে তার ৩৪.২০% শেয়ারের বিপরীতে প্রতিবছর যে পরিমাণ লভ্যাংশ অর্জন করে, তার ৪২.৬৫% লভ্যাংশ গ্রামীণ কল্যাণ নামে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রদান করে আসছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠার সময় গ্রামীণ কল্যাণের কাছ থেকে ৫৩ কোটি ২৫ লাখ ৬২ হাজার ৯৪১ টাকা ঋণ গ্রহণ করেছিল। আইন অনুযায়ী শুধু এই অর্থই গ্রামীণ কল্যাণকে ফেরত দেওয়ার কথা। জানা যায়, মাত্র ৫৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার বিপরীতে গ্রামীণ টেলিকম এ পর্যন্ত ৫০০০ কোটি টাকার ওপরে দিয়েছে গ্রামীণ কল্যাণকে বার্ষিক ৪২.৬৫% লভ্যাংশ হিসেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কম্পানি আইনের ২৮ ধারায় গঠিত এই অলাভজনক কম্পানির কোনো শেয়ার মূলধন নেই, কোনো ব্যক্তি মালিকানা নেই । আইন অনুযায়ী এর কোনো ডিভিডেন্ড অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সুযোগ নেই। গ্রামীণের এই কর্মকাণ্ড কোম্পানী আইনের ২৮(১) এবং ২৯(১) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১১ সালের ১৩ এপ্রিল এই দুই কম্পানির মধ্যে স্বাক্ষিরত চুক্তিটিকেও তারা অবৈধ বলছেন। চুক্তিতে শর্ত দেখানো হয়, গ্রামীণ টেলিকম প্রতিবছর তার লভ্যাংশের ৪২.৬৫ % গ্রামীন কল্যাণকে প্রদান করবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কম্পানি আইনের বিধান এবং লাইসেন্সের শর্তের পরিপন্থী ছিল ওই চুক্তি। এ ধরনের অবৈধ চুক্তির কোনো কার্যকারিতা নেই। তারা আরো বলছেন, ২০১১ সালের ওই চুক্তির এক দশকেরও বেশি সময় আগে থেকেই গ্রামীন টেলিকম বেআইনিভাবে গ্রামীণ কল্যাণকে লভ্যাংশ দিয়ে আসছিল।

২০১৭ সালের পর থেকে লভ্যাংশ আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। দেখা যায়, ২০২২ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ টেলিকম আনুমানিক ৫০০০ কোটি টাকার বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে গ্রামীণ কল্যাণকে। আর এই লাভজনক অবস্থায় থেকেও গ্রামীণ কল্যাণ থেকে নেওয়া ৫৩.২৫ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেনি।জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকমের নিরীক্ষকগণও বহু আগে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে এই সতর্ক করে যে গ্রামীণ কল্যাণকে প্রদানকৃত লভ্যাংশের বৈধতা নেই। এই অর্থ গ্রামীণ কল্যাণ কোথায় খরচ করেছে সেই তথ্যও পাওয়া যায় না।বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রামীণ কল্যাণের এমন কোনো প্রকল্প নেই, যেখানে এই অর্থ ব্যয় হতে পারে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এই ৫০০০ কোটি টাকা এখন গ্রামীণ কল্যাণের হাতে নেই । সেটি কয়েক হাত ঘুরে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার হয়েছে।

সূত্র মতে, গ্রামীণ টেলিকমের বাকি লভ্যাংশ অর্থাৎ ৫৭.৩৫ % লভ্যাংশ, যার পরিমাণ ৭০০০ কোটি টাকার বেশি, সেই অর্থেরও হদিস নেই। মনে করা হয়, এর প্রায় ৯০ ভাগ নামে-বেনামে অবৈধভাবে হস্তান্তর কিংবা সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার হয়েছে। পরে সেই অর্থ দিয়ে ড. ইউনূস নিজের ব্যক্তিগত নামে বিভিন্ন দেশে সম্পদ ক্রয়সহ নানা রমরমা ব্যবসা করছেন। আর এর কিছু অংশ বিদেশে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থবিরোধী কাজে লবিস্টের পেছনে খরচ করেছেন।

জানা যায়, গ্রামীণ কল্যাণ ছাড়াও ড. ইউনূসের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টে প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা বেআইনিভাবে প্রদান করছে গ্রামীণ টেলিকম। ট্রাস্টের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলামের প্রস্তুতকৃত একটি হিসাব থেকে দেখা যায় ৩১ ডিসেম্বর, ২০১০ থেকে ২২ আগস্ট, ২০১৩ সময়ের মধ্যে গ্রামীণ টেলিকম শুধু গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টকে ১ হাজার ৪১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা দান হিসেবে দিয়েছে, যা পরে কয়েক হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এ অর্থও বেআইনিভাবে নানান হাতবদলের পর সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার হয়েছে এবং বিদেশে এই অর্থের একমাত্র সুবিধাভোগী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কম্পানি আইন এবং লাইসেন্স অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকম একটি অলাভজনক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরও ড. ইউনূস বেআইনিভাবে গ্রামীণ টেলিকম থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন, যা কোকম্পানী আইনের ৩৯৭ ধারার লঙ্ঘন। গ্রামীণ টেলিকমের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্য এই অপরাধের দায় এড়াতে পারেন না বলেও মনে করছেন বিষেজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিধান অনুযায়ী তারা সবাই পাঁচ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার মতো অপরাধ করেছেন।

কোম্পানী আইনের ৩৯৭ ধারায় রয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের আওতায় আবশ্যকীয় বা এই আইনের কোনো বিধানের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রণীত কোনো রিটার্ন, প্রতিবেদন, সার্টিফিকেট, ব্যালান্সশিট, বিবরণী অথবা অন্য কোনো দলিলে কোনো গুরত্বপূর্ণ বিষয়ে ইচ্ছাকৃত কোনো তথ্য, বিবরণ বা বিবৃতি দেন, যাহা সম্পর্কে তিনি জানিতেন যে উহা মিথ্যা, তাহা হইলে তিনি অনধিক পাঁচ বৎসর মেয়াদের কারাদণ্ডে এবং তৎসহ অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন, এবং উক্ত কারাদণ্ড যেকোনো প্রকারের হইতে পারে।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ