শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০১ পূর্বাহ্ন

রমজান আসার আগেই বেড়েছে দুধ-চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম

প্রতিনিধির / ৫৯ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩
রমজান আসার আগেই বেড়েছে দুধ-চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম
রমজান আসার আগেই বেড়েছে দুধ-চিনিসহ নিত্যপণ্যের দাম

রোজা আসার আগেই মুরগিসহ গরু-খাসির মাংসের দাম বেড়ে গেছে। বেড়েছে দুধ-চিনিসহ আরো কিছু নিত্যপণ্যের দাম, রমজান মাসে ঘরে ঘরে যেসবের চাহিদা বেড়ে যায়। বর্তমান এই বাজার পরিস্থিতি আসন্ন রমজানে ক্রেতা বা ভোক্তা সাধারণের জন্য দুর্ভোগের আভাস দিচ্ছে।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, রোজার মধ্যে বাজারে কেউ হুমড়ি খেয়ে না পড়লে নতুন করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য মাসজুড়ে র‌্যাব, পুলিশ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বাজার পর্যবেক্ষণ করবেন।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডলারের কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। যেসব পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়, সেগুলোর দাম সারা বিশ্বেই বেড়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী এক কোটি পরিবারের পাঁচ কোটি মানুষকে স্বল্পমূল্যে চিনি, তেল, ডাল, খেজুর ও ছোলাবুট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।’

অন্যান্য পণ্যের মধ্যে বাজারে বোতলজাত খাওয়ার পানির দাম বেড়েছে। রমজানে এটিরও বিশেষ চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা বলছেন, দামের সঙ্গে আয়ের সংগতি রাখতে তাঁরা নিত্যপণ্য কেনা ও খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনের পক্ষে বলা হচ্ছে, নিম্ন আয়ের মানুষ ও নিম্নমধ্যবিত্তের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে কেনাকাটা। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিনোদনে ব্যয় না করে তা খাদ্য কেনার পেছনে দিচ্ছেন তাঁরা।রাজধানীর গুলশান-১, বাড্ডা, তেজগাঁও এলাকার মুদি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, আড়ং ও মিল্ক ভিটা কম্পানির দুধ বাড়তি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাজারগুলোতে মাংস, পানি বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্বল্প ননিযুক্ত ৫০০ মিলিলিটার আড়ং দুধ ৫০ টাকা ও এক লিটার ১১০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তাদের এক লিটারের দুধের দাম গত জানুয়ারিতে ছিল ৯৫ টাকা, এখন ১৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মিল্ক ভিটা আধা লিটারের দুধের দাম পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে মিল্ক ভিটা ১ লিটার ৯০ টাকা, আল্ট্রা মিল্ক এক লিটার ৯০ টাকা, ফার্মফ্রেশ এক লিটার ৯৫ টাকা, প্রাণ এক লিটার ৯০ টাকা।

সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি, তা এখন ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি। গরুর মাংস ছিল ৬৬০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, এখন তা ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। খাসির মাংস ছিল ৯০০ থেকে ৯৫০ টাকা কেজি, বর্তমানে বাজারে এক হাজার ১০০ টাকা।

রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানার শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারে মাংস বিক্রেতা আলী হোসাইন কোরাইশি বলেন, ‘সবাই গরুর মাংস ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছে; কিন্তু আমরা বিক্রি করছি ৭৫০ টাকা করে। গরুর দাম বেড়েছে। আগে ৪০ কেজির এক বস্তা ভুসির দাম ছিল ৮৫০ টাকা, এখন সেটা এক হাজার ৪০০ টাকা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ২০০ টাকা।’তিনি বলেন, ‘আমার এই বয়সে এই প্রথম এত দামের কথা শুনতেছি। গরু পালতে খরচ বেশি হচ্ছে, তো সে কি বেশি দামে বিক্রি করবে না? খামারির তো মাসে অন্তত পাঁচ হাজার টাকা লাভ থাকতে হবে।’

কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজার এলাকায় খাসির মাংস বিক্রেতা নুরে আলম বলেন, ‘গত ডিসেম্বরের পর থেকে এক হাজার ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এ সময় খাসির দাম কমার কথা ছিল; কিন্তু কমছে না।’

রোজায় দুধ ও মাংসের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, ‘রোজায় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকায় শরীরে মেটাবলিজমের একটা পরিবর্তন আসে। ইফতারে ভাজাপোড়া খাবার না খেয়ে স্যুপজাতীয় খাবার খেতে হয়। এর এক ঘণ্টা পর প্রোটিনজাতীয় খাবার খাওয়া উচিত, যাতে শরীরের ভারসাম্য বজায় থাকে। এ জন্য সবারই খাবারের তালিকায় দুধ-মাংস থাকা দরকার। তবে লালের চেয়ে সাদা মাংস খেলে ভালো।খুচরা ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, সরকার নির্ধারিত খোলা চিনির দাম ১০৭ টাকা কেজি হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা কেজি দরে। প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া দুর্লভ। দু-একটি দোকানে হঠাৎ পাওয়া গেলেও দাম বেশি। পানি গত এক মাসের ব্যবধানে আধালিটারে পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ২০ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে এক লিটার, দুই লিটার ও পাঁচ লিটারের পানির বোতলেও পাঁচ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। পোলাওয়ের চাল কিছু দিন আগে ছিল ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বৃদ্ধির কারণে তাঁদের বিক্রি কমে গেছে। গুলাশান-১-এ এমএস জিয়া জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘তীর কম্পানির ডিলার প্যাকেজজাত প্রতি কেজি চিনিতে ১১০ টাকা করে নিত, প্যাকেটের গায়ে দাম ১১২ টাকা। দুই টাকা লাভ হতো। কয়েক দিন ধরে তারা বলছে ১১২ টাকা করে দিতে হবে। এখন একই দামে কিনে বিক্রি করলে লাভ করব কী? এ জন্য বস্তার খোলা চিনি বিক্রি করছি। এদিকে আবার পোলাওয়ের চালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে গেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এক বছর আগে যখন পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৪০০ টাকায় কিনতাম, সেটা হঠাৎ করে ৮৮৫ টাকা হয়ে গেল। ১৫ টাকা লাভে ৯০০ টাকায় বিক্রি করি। এতে আমাদের লাভ বাড়েনি। ববং পুঁজি বেশি লাগছে।’

একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আয়েশা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে মূল্যস্ফীতি হয়েছে। এ নিয়ে তো কিছু করা যাচ্ছে না। বাধ্য হয়েই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কম কিনছি, কম খাওয়া হচ্ছে। মানিয়ে নিতে হচ্ছে।’বাড্ডার আরাফাত জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. মাসুদ বলেন, কিছুদিন ধরে মিল্ক ভিটা আধালিটারের দুধের দাম বাড়িয়েছে। আগে ৪৫ টাকা ছিল এখন ৫০ টাকা। এক লিটারের দাম অকশ্য বাড়ায়নি।

ক্রেতাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট গোলাম রহমান বলেন, ‘নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এদের জীবনমানের অবনতি হচ্ছে। এখন তাদের কাছে বিনোদন বলতে কিছু নেই। চিকিৎসা, শিক্ষা এগুলোতে কাটছাঁট করে যে পণ্য না কিনলেই নয়, সেটা নিচ্ছে। নিম্নমধ্যবিত্তদের গরুর মাংস এখন বিলাসিতা হয়ে গেছে। এটা যে সংকটময় অবস্থা, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার কিছুটা চেষ্টা করছে, কিন্তু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের অতিমুনাফা ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণেও দাম বাড়ছে। এখন সরকারের করণীয় হচ্ছে, মানুষের আয়-রোজগার কর্মসংস্থান যাতে বাড়ে, সেদিকে বেশি করে নজর দেওয়া।

রোজা আসার আগেই দাম বাড়ার বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘রমজানে চাহিদা বেড়ে যায়। তখন বাজার অস্থির করার জন্য অনেকে চেষ্টা করে। এ জন্য আমাদের অভিযানগুলো জোরদার করছি। স্থানীয় প্রশাসন, যেমন ইউএনও, ডিসিদের সম্পৃক্ত করছি। এর বাইরে কোনো বাজারে যদি পণ্যের দাম বেশি থাকে, তাহলে ওই বাজারের কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। যদি কোনো জায়গায় দাম বেশি হয়, তাহলে আমরা বাজার কমিটি বাতিল করে দেব। সাধারণ সময়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। রোজার সময় আমরা ৫০টি করে অভিযান পরিচালনা করব।’

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ