রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পুরো বিশ্বেই অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তীব্র সংকটের কারণে ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড অবমূল্যায়ন হয়েছে। যার প্রভাব অন্যান্য শিল্পের মতো গাড়ির বাজারেও পড়েছে। ডলার সংকটে কমেছে গাড়ির আমদানি, বেড়েছে দাম। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এরই মধ্যে দেশে নতুন ও রিকন্ডিশন্ড ব্যক্তিগত গাড়ি বিক্রি ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে বলে জানান আমদানিকারক ও বিক্রয় প্রতিনিধিরা।
গাড়ি আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকট কাটাতে গত অক্টোবরে সরকারের পক্ষ থেকে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসপণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন ‘বিলাসপণ্য’ হিসেবে গাড়িকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যার কারণে গাড়ি আমদানি করতে হলে শতভাগ এলসি মার্জিনে আমদানি করতে হয়। এতে গাড়ির আমদানি কমে গেছে ৮০ শতাংশ। ডলারের বিনিময়মূল্য বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গাড়ির দাম ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় গাড়ির বিক্রিও কমে গেছে উল্লেখযোগ্য হারে।রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারক ও পরিবেশক সমিতির (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন কালের কণ্ঠকে জানান, বতর্মানে গাড়ি আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিন পার করছেন। কারণ একদিকে গাড়ির আমদানি বন্ধ, অন্যদিকে যে গাড়িগুলো রয়েছে, সেগুলোও বিক্রি করতে পারছেন না। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় চার-পাঁচ মাস ধরে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ির বিক্রি কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ির ব্যবসা করছেন। গাড়ি বিক্রি করতে না পারায় তাঁরা ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। শোরুমের ভাড়া, অফিসকর্মীদের বেতন দিতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী।
তিনি জানান, ব্যক্তিগত গাড়ি একটি প্রয়োজনীয় জিনিস, সেটাকে বিলাসীপণ্যে অন্তর্ভুক্ত করে আমদানিতে ১০০ শতাংশ এলসি মার্জিন করা হয়েছে। যার কারণে গাড়ির আমদানি ৮০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। শতভাগ মার্জিন দিয়ে কিছু গাড়ির আমদানি করতে চাইলেও ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো এলসি দিচ্ছে না।হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, নতুন ও রিকন্ডিশন্ড ব্যক্তিগত গাড়ির বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তার মধ্যে ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দখলে। আর বাকি নতুন গাড়ির দখলে রয়েছে। রিকন্ডিশন্ড গাড়ি থেকেই বছরে চার-পাঁচ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব দেওয়া হয় সরকারকে। ডলার সংকটের কারণে গাড়িসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানি কমে যাওয়ায় এবার এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ে বিশাল একটি ঘাটতির মধ্যে পড়তে হবে।
সরেজমিনে গাড়ির বাজার : গত মঙ্গলবার সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন রিকন্ডিশন্ড ও নতুন গাড়ির শোরুম ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাড়ির বিক্রি কমে যাওয়ায় শোরুম ভাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন গাড়ির ব্যবসায়ীরা।প্রগতি সরণি বারিধারায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শোরুম এএসআর অটোকার। এই শোরুমের ম্যানেজার এ আর খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলার সংকটে গাড়ির আমদানি বন্ধ থাকা ও গাড়ির বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে আমরা গাড়ি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মধ্যে আছি। আমার শোরুমে এরই মধ্যে ৯০ শতাংশ গাড়ি বিক্রি কমে গেছে। বিক্রি কমে যাওয়ায় তিন মাস ধরে শোরুম ভাড়া দিতে পারছি না, কর্মচারীদের বেতনও ঠিকমতো দেওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকঋণ নিয়ে আছি বিপদে, নিয়মিত ব্যাংকগুলো চাপ দিয়ে যাচ্ছে তার পরও ঋণ পরিশোধ করতে পারছি না। সব মিলিয়ে এখন মহাবিপদের মধ্যে আছি আমরা গাড়ির ব্যবসায়ীরা।’
নতুন গাড়ির বাজারে একটি সুপরিচিত জাপানিজ ব্র্যান্ড হোন্ডা। হোন্ডা ব্র্যান্ডের বাংলাদেশে তিনটি শোরুম রয়েছে। তার মধ্যে দুটি ঢাকায়, আরেকটি চট্টগ্রামে। রাজধানীর কুড়িল হোন্ডার শোরুমে গিয়ে কথা হয় সেলস এক্সেকিউটিভ নাহিল আহমেদের সঙ্গে। হোন্ডা গাড়ির বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডলার সংকট ও আমদানিতে এলসি মার্জিন বাড়ার কারণে ২০ শতাংশ বেড়েছে হোন্ডা গাড়ির দাম। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় হোন্ডা গাড়ির বিক্রি কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।