মাদারীপুরের শিবচরে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে সম্প্রতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১৯ জন। ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার পর জানা গেলো বাসটির চলাচলের অনুমতি ছিল না। ছিল না ফিটনেস সনদও। তারপরও সেটি নিয়মিত ঢাকা-খুলনা রুটে যাত্রী পরিবহন করছিল। দুর্ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এমনটিই জানায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
তবে ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব অবৈধ বাস চলাচল করছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এমন শত শত বাস পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। এর মধ্যে গ্রিনলাইন, হানিফ, সোহাগ, এনা, ইউনিক, গোল্ডেন লাইনের মতো নামিদামি কোম্পানির বাসও রয়েছে।
বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, ইমাদ পরিবহনের ওই বাসের রুট পারমিট নেই। বাসটির কোনো অনুমোদন ছিল না, ফিটনেসও নেই। তবে এটা স্থানীয় পুলিশ ও জেলা প্রশাসন তদারকি করবে। তারাও জরিমানা করে। কিন্তু অনেক সময় পুলিশ ও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলাচল করে ফিটনেসবিহীন বাস।২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক ব্যবহার করে পদ্মা সেতু দিয়ে দক্ষিণাঞ্চলগামী যানবাহন চলাচল বাড়তে থাকে। এর ফলে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক এবং এর নিচে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা রুটে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক ব্যবহার করে বাসের রুট পারমিট না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নিচের অংশের উন্নয়ন ও যানজট নিরসন কমিটির সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।
সে আলোকে ৮ সেপ্টেম্বর বিআরটিএ’র চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়ে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক দিয়ে বাসের রুট পারমিট বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ। পরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে করণীয় সম্পর্কে জানতে চান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। সচিবের দপ্তর উড়ালসড়ক ব্যবহার না করে নিচ দিয়ে বাস চলাচলের অনুমতির জন্য সিটি করপোরেশনকে জানানোর পরামর্শ দেয়। বিআরটিএ গত বছরের ২ নভেম্বর ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালককে চিঠি দিয়ে নগর পরিবহনে বাস রুট যৌক্তিকীকরণের দায়িত্ব পাওয়া কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপনের অনুরোধ করে। এই কমিটির সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। ওই চিঠি চালাচালির মধ্যেই প্রায় সাত মাস চলে গেছে, কিন্তু সুরাহা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের পাশাপাশি এর নিচ দিয়েও বাসের অনুমোদন বন্ধ রয়েছে।
বিআরটিএ সূত্র বলছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ওই সেতু দিয়ে চলাচলের জন্য ৫০০ বাসের রুট পারমিটের আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের চিঠি পাওয়ার পর তারা এসব বাসের রুট পারমিট দেওয়া বন্ধ করে দেয়। গত ৭ মাসে আরও প্রায় ৫০০ বাসের রুট পারমিটের আবেদন জমা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ঢাকায় লাখ লাখ অবৈধ রিকশা যানজট তৈরি করছে। সেখানে সিটি করপোরেশন এটা বন্ধ না করে যানজটের দোহাই দিয়ে বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে যাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এখন সিটি করপোরেশন যদি শহরের বাইরে টার্মিনাল তৈরি করে দেয়, তাহলে দূরপাল্লার বাস আর শহরে ঢুকবে না।সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহমেদ বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর সারা দেশ থেকে যানবাহন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়াল সড়ক দিয়ে চলাচল শুরু করে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ জন্য নতুন রুট পারমিট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এখন মাস দুয়েকের মধ্যে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়কের নিচের সড়কের উন্নয়নকাজ শেষ হবে। তখন হয়তো উড়ালসড়কের নিচ দিয়ে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া যাবে।
তবে এ বিষয়ে খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, চার লেনের পদ্মা সেতু দিয়ে দিনে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার যানবাহন চলাচলের সক্ষমতা আছে। বর্তমানে পদ্মা সেতু দিয়ে দৈনিক গড়ে ১৫ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। দৈনিক টোল আদায় হচ্ছে মাত্র সোয়া দুই কোটি টাকার মতো। এখন নতুন করে বাস চলাচলের অনুমতি দেওয়া না হলে এই সেতুর সুফল মিলবে না। যাত্রীরাও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক ব্যবহার করে নতুন বাস রুট অনুমোদন দিতে হবে। আর নগরে যানজন কমাতে ডিএসসিসিকে সড়ক এবং ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে হবে।