শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন

আগের সব রেকর্ড ভেঙে লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে রডের দাম

প্রতিনিধির / ৭৫ বার
আপডেট : রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০২৩
আগের সব রেকর্ড ভেঙে লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে রডের দাম
আগের সব রেকর্ড ভেঙে লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে রডের দাম

আগের সব রেকর্ড ভেঙে লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে রডের দাম। এতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন ক্রেতারাও। নির্মাণ মৌসুমের সময়েই এবার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত রড ও সিমেন্টের বিক্রি কমে গেছে। প্রতিবছর (জানুয়ারি-মার্চ) নির্মাণ মৌসুমের সময় সবচেয়ে বেশি রড ও সিমেন্ট বিক্রি হয়। উৎপাদক ও বিক্রেতারা বলছেন, এর আগে কখনোই লাখ টাকায় রড বিক্রি হয়নি।

ক্রমাগত রড ও সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকারি অবকাঠামো নির্মাণের খরচও বাড়ছে। বাড়তি দাম তুলতে না পেরে সরকারি নির্মীয়মাণ প্রকল্পের কাজ ফেলে রাখছেন ঠিকাদাররা। বেসরকারি নির্মাণকারী বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু করতে চাচ্ছে না। পুরনো কাজ নিয়েই তারা এখন বিপাকে আছে বলেও নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে।রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ডলার সংকটে ঋণপত্র খোলা নিয়ে জটিলতার কারণে স্ক্র্যাপ বা পুরনো জাহাজ আমদানি একেবারেই কমে যাওয়া, ডলারের বিনিময়মূল্য বেশি থাকা এবং গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে, যার প্রভাব এরই মধ্যে দেশের বাজারে পড়েছে।

রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, কুড়িলসহ বিভিন্ন এলাকার রড-সিমেন্টের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিএসআরএম ব্র্যান্ডের রড প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ দুই হাজার থেকে এক লাখ আড়াই হাজার টাকায়। জিপিএইচ ইস্পাত ব্র্যান্ডের রড প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে এক লাখ এক হাজার টাকায়। এ ছাড়া একেএস ব্র্যান্ডের রড প্রতি টন এক লাখ এক হাজার টাকা, আরএসএম ব্র্যান্ডের রড বিক্রি হচ্ছে ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা, আকিজ ব্র্যান্ডের রড প্রতি টন ৯৮ হাজার টাকা, আরআরএম ব্র্যান্ডের রড টন ৯৭ হাজার টাকা, এসএস ব্র্যান্ডের প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৯৬ হাজার টাকায়।এর পাশাপাশি দাম বাড়ায় এখন ৫০০ টাকার নিচে কোনো ব্র্যান্ডের সিমেন্টের বস্তা বিক্রি হচ্ছে না। স্ক্যান সিমেন্ট বস্তা ৫৬০ টাকা, শাহ স্পেশাল বস্তা ৫৩০ টাকা, বসুন্ধরা সিমেন্ট বস্তা ৫৩০ টাকা, বেঙ্গল সিমেন্ট বস্তা ৫২০ টাকা, ক্রাউন সিমেন্ট বস্তা ৫৩০ টাকা ও সুপাক্রিট সিমেন্ট বস্তা ৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কুড়িল প্রগতি সরণি এলাকায় হেলমি এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাসিন রহমান হেলমি বলেন, ‘বর্তমানে রড ও সিমেন্টের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার কারণে বিক্রি একদমই কমে গেছে। আগে মাসে এক লাখের বেশি সিমেন্টের বস্তা বিক্রি হতো। এখন মাসে ৪৫ থেকে ৬০ হাজার সিমেন্টের বস্তা বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ সিমেন্টের বিক্রি কমে গেছে।’তিনি আরো বলেন, ‘প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টন রড বিক্রি করা যেত, এখন বিক্রি করতে পারছি মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ টন। রডের দাম বাড়ার কারণে আমাদের বেশি বিনিয়োগ করতে হচ্ছে। বিক্রি কমে যাওয়ার কারণে আমরা খুবই ক্ষতির মুখে আছি। দোকানভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, অগ্রিম ট্যাক্স ও ব্যাংক লোন নিয়ে খুবই বিপাকে আছি।’

বাড্ডা শাহজাদপুর এলাকার ন্যাশনাল স্টিল করপোরেশনের ব্যবসায়ী মাহবুব আলম বলেন, ‘মাত্রাতিরিক্ত দাম বাড়ার কারণে আমাদের রড বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে বা নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেউ এখন নতুন করে কাজ শুরু করতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ সবাই নির্ধারিত একটি বাজেট ধরে কাজ শুরু করে, এখন সেই বাজেটের লিমিট ছাড়িয়ে গেছে। যারা পুরনো কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছিল তারাও এখন কাজ বন্ধ রেখেছে।’বাড্ডার আবুল কাশেম ট্রেডিংয়ের ম্যানেজার এনামুল কবীর বলেন, ‘রড ও সিমেন্টের রেকর্ড দাম বাড়ার কারণে এরই মধ্যে ছোট ছোট ডেভেলপার কম্পানিগুলো কাজ বন্ধ করে দিয়েছে। বড় বড় কিছু কম্পানি এখন কাজ করছে। যার কারণে আমাদের বিক্রি অনেক কমে গেছে।’

নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এনজাক ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এমডি মামুর রশিদ বলেন, ‘রড-সিমেন্টের দাম বাড়ার কারণে আমরা এখন নতুন করে কাজ শুরু করার সাহস পাচ্ছি না। পুরনো প্রকল্পের কাজ নিয়ে বিপাকে আছি। খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে এরই মধ্যে ফ্ল্যাটের দাম ৩০ শতাংশ করে বেড়ে গেছে। আগে যে ফ্ল্যাট এক কোটি টাকায় বিক্রি করেছি, সেটি এখন এক কোটি ৩০ লাখ টাকা বিক্রি করতে হবে।’মামুর রশিদ বলেন, ‘রড-সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধির আগে যেসব ফ্ল্যাট বিক্রি করেছি, খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন আগের দামে ক্রেতাদের বুঝিয়ে দিতে পারছি না। যারা কিনছে তারাও বেশি দাম দিতে চাচ্ছে না।’ যার কারণে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে নিয়মিত ঝামেলা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএম) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শাহরিয়ার স্টিল মিলসের এমডি শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, ‘ডলারের বিনিময়মূল্য বেশি, কাঁচামাল আমদানি ব্যাহত, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। যার কারণে এর প্রভাব বাজারে পড়েছে। এখন একদিকে আমরা কাঁচামালসংকটে সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছি না, অন্যদিকে দাম বাড়ার কারণে বাজারে চাহিদা কমে গেছে, ফলে যা উৎপাদন করছি সেটাও বিক্রি হচ্ছে না।’

মাসাদুল আলম মাসুদ বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে। বেসরকারি বিভিন্ন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের কাজও ৩০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। এক লাখ টাকায় এক টন রড বিক্রি করতে হবে সেটা তো আমরা কখনোই ভাবিনি। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে এটা হয়েছে। রডের চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে আমাদের রড বিক্রি প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। এখন আমরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সামনে পরিস্থিতি আবার স্বাভাবিক হবে সেই আশায় আছি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ