মানহানির মামলায় দুই বছরের সাজার বিরুদ্ধে আপিল করবেন ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক আইনপ্রণেতা এই মামলা দায়ের করেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৩ মার্চ গুজরাটের একটি আদালত ৫২ বছর বয়সী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ‘মোদি’ উপাধি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে আদালত রাহুলকে ৩০ দিনের জামিন এবং আপিল করার সুযোগ দিয়েছেন।মানহানির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডের একদিন পরেই রাহুলকে লোকসভা থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। ফলস্বরূপ, ভারতীয় লোকসভায় তার সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা দায়ের করা হয়।সেই সময় লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সম্বোধন করে বলেছিলেন, ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’। তিনি আরও বলেন, ‘কেন সব মোদি চোর হয়? কীভাবে সব চোরের ”মোদী” উপাধি থাকে?’
ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ের বিরুদ্ধে সুরাট দায়রা আদালতে আপিল দায়ের করেছেন রাহুল গান্ধী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, সোমবার (৩ এপ্রিল) এই আবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে রাহুলের আইনজীবী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তদন্ত ও আইনি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। রাহুল গান্ধীর বিচার এবং সংসদ থেকে অযোগ্য ঘোষণাকে বিরোধী রাজনীতিবিদরা মোদি সরকারের আক্রমণাত্মক কৌশলের সর্বশেষ প্রমাণ হিসেবে দেখছেন।
২৫ শে মার্চ রাহুল জানিয়েছিলেন, তিনি শাস্তি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করবেন না কারণ বিষয়টি বিচারাধীন। তবে, সংসদে তার অযোগ্যতা প্রসঙ্গে এক কংগ্রেস নেতা জানান, আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানির সঙ্গে মোদীর সম্পর্ক নিয়ে ‘কঠিন প্রশ্ন’ করার জন্য তাকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।বিরোধী সমালোচকরা অভিযোগ করেছেন, মোদি সরকার টাইকুন আদানির নেতৃত্বাধীন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোকে অযৌক্তিকভাবে সমর্থন করছে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ পুঁজি বাজারের অনিয়ম ও ট্যাক্স হ্যাভেনে বিনিয়োগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে কোম্পানির শেয়ারের পতন ঘটে।
রাহুলের সাজা ঘোষণার একদিন পর ১৪টি রাজনৈতিক দল যৌথভাবে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দায়ের করে। এতে বলা হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ইচ্ছাকৃত লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। আগামী ৫ এপ্রিল এই আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।রাহুলের সংসদীয় সদস্যপদ প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত বিরোধীদের বেশ কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। ‘গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে’ বিরোধী ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গত ২৭ মার্চ কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খার্গের ডাকা বৈঠকে আরও ১৬টি দলের নেতারা যোগ দেন। এছাড়া রাহুলের সংসদীয় সদস্যপদ প্রত্যাখ্যানের প্রতিবাদে তার দলসহ অনেক বিরোধী নেতা সেদিন কালো পোশাক পরে সংসদ ভবনে আসেন।