‘সকাল ৭টায় বন্ধুর ফোনে ঘুম ভাঙে। ঘুম ভেঙেই জানতে পারি আমার দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসে শুধু চেয়ে থাকি, দেখি স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।’ এভাবেই আগুনে দোকান পুড়ে যাওয়ার কথা জানাচ্ছিলেন বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটের রিয়া গার্মেন্টসের মালিক রাসেল মিয়া। রাসেল মিয়ার দোকানে মোট ২৫ লাখ টাকার পণ্য ছিল।
শুধু রাসেল মৃধা নয়, বঙ্গবাজার সংলগ্ন সেক্রেটারিয়েট রোডের ফুটপাতের দিকে তাকালে দেখা যায়, শত শত মহাজন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। ফেলছেন চোখের পানি। চারদিকে শুধু আহাকার। সেই ফুটপাতের সামনে মুখোমুখি বসে আছেন লিমন বেপারি ও লিটন শেখ। লিমন বেপারি অঝোরে কাঁদছেন আর লিটন শেখ তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। দুইজনেরই দুটি করে মোট চারটি দোকান আছে বঙ্গবাজার আর এন এক্স মার্কেটে।সকাল সাড়ে ছয়টায় খবর পেয়ে মার্কেটের সামনে আসেন লিটন শেখ ও লিমন বেপারি। আগুন তখন গ্রাস করে ফেলেছে বঙ্গবাজারের কাপড়ের মার্কেট। কোনোভাবেই ভেতরে ঢোকার অবস্থা নেই। লামিয়া প্যান্ট ওয়্যার নামে বঙ্গবাজারের ২০৮৩ নাম্বার দোকানে ৫০ হাজার টাকা ক্যাশ ও মালামাল ছিল ১৩ লাখ টাকার। গোডাউনে ছিল ২০ লাখ টাকার মালালাম। এসবের কোনো কিছুই তিনি বের করতে পারেননি। সারা জীবন ধরে তিলতিল করে গড়ে তোলা ব্যবসা চোখের সামনে পুড়ে যেতে দেখে কোনোভাবেই নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছেন না। বসে পড়েছেন রাস্তায়। তিনি বলেন, ‘কিছুই বাইর করতে পারি নাই ভাই। আমরা সর্বস্বান্ত হইয়া গেলাম।’
কান্না থামিয়ে এবার কথা বললেন লিমন বেপারি। তিনি বলেন, ‘বঙ্গ মার্কেটে আমার দুইটা দোকান। ক্যাশে ছিল ২৭ লাখ টাকা। হাতের মুঠায় জীবন নিয়া ক্যাশ টাকাগুলা বাইর করতে পারছি। কিন্তু কোনো মালামাল বাইর করতে পারি নাই। দোকানে আছিল ১৪ লাখ টাকার মাল।’
মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগে। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এতে পুড়ে যায় দোকানপাট। নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে ফায়ার সার্ভিসের ৫০টি ইউনিট। প্রচুর পরিমাণে দাহ্য পদার্থ ও বাতাসের কারণে আগুন ভয়াবহ রূপ নেয়। আগুন নেভাতে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী অংশ নিয়েছে।