বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:১১ পূর্বাহ্ন

৭.৫ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন

প্রতিনিধির / ৭৭ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৩
৭.৫ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন
৭.৫ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন

অর্থ বিভাগের হিসাবে আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি খুব বেশি কমবে না। ফলে প্রধান চ্যালেঞ্জই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। আর সরকারের পরিচালনা ব্যয়ে দুটি বড় ধরনের চাপ বাড়বে।

সেগুলো হচ্ছে-ভর্তুকি ও সুদ ব্যয়ে। এছাড়া রয়েছে রাজস্ব বাড়ানো নিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত। তিন চ্যালেঞ্জের মুখে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে।প্রাথমিকভাবে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৫ লাখ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতি বাজেট দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা।

এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হবে। আর এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান সরকার আমলের শেষ বাজেট হওয়ায় অনেকেই এটিকে ‘নির্বাচনি’ বাজেট হিসাবে আখ্যায়িত করছেন।বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হারসংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির’ ভার্চুয়াল বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হয়।

ওই বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টায় বৈঠক শুরু হয়। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে বৈঠক শেষ হয় বিকাল সাড়ে ৪টায়।সূত্র জানায়, বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থান ভালো আছে। ভালো সূচক নিয়ে আমাদের আগামীতে ভালো করতে হবে।

বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, আগামী অর্থবছরে এডিপি সঠিক ধরা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাজেটের ঘাটতি গত বছরের তুলনায় কমেছে এটি ভালো। বৈঠক শেষে রাতে যোগাযোগ করা হলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান যুগান্তরকে বলেন, অর্থনীতি চাপে আছে কিন্তু ঠিক হয়ে যাবে।

এ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তিনি আরও বলেন, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা ও ভাতা বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। বহু লোক বিদেশ যাচ্ছে, প্রবাসী আয় বাড়বে। এতে রিজার্ভের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছেন, ব্যাংকের সুদ হার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্ধারণ করা হবে।

সূত্র মতে, ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে’ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা হচ্ছে মূল্যস্ফীতিকে। কারণ আগামী বছরেও মূল্যস্ফীতি বহাল থাকবে-এমনটি ধরে নেওয়া হয়েছে।

আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির হার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা করতে গরিব মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি বাড়ানো হবে।এছাড়া বৈঠকে তুলে ধরা হয় পরিচালনা খাত। সেখানে বলা হয়, এ খাতে আগামী অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হবে ভর্তুকি ও সুদ ব্যয়ে। গত বছরের তুলনায় ভর্তুকি ও সুদ খাতে কমপক্ষে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ ব্যয় বাড়বে।

ভর্তুকি কমপক্ষে এক লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি দাঁড়াবে। আর সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ১ লাখ ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। বৈঠকে নির্বাচনি বছরে প্রবৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।তবে এখনো আর্থিক চাপ রয়েছে বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। বৈঠকে প্রাক্কলনে দেখানো হয়, নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপের ফলে এরই মধ্যে আমদানি কমছে। এতে শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কম হবে।

আর উৎপাদন কম হলে রাজস্ব আদায় কমবে। এরপরও প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরা হয়েছে। অবশ্য চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে।তবে সর্বশেষ বিশ্বব্যাংকের ফোরকাসে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।

ওই বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের ভাতা ও ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। নতুন করে প্রস্তাব দেওয়া হয় ২৪ লাখ সুবিধাভোগীর সংখ্যা বাড়াতে।ফলে এ খাতে বরাদ্দ থাকছে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া টিসিবি, ওএমএস কর্মসূচির কারণে এ খাতে ভর্তুকি বাড়বে ১৩শ কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ ঋণের ৮০ শতাংশ নেওয়া হবে ব্যাংকিং খাত থেকে। বাকি ২০ শতাংশ নেওয়া হবে সঞ্চয়পত্র থেকে।

বৈঠকে রাজস্ব বাড়ানোর ব্যাপারে আইএমএফ’র শর্ত নিয়ে আলোচনা হয়। তবে আগামীতে রাজস্ব আরও বাড়বে বলে আশা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আয় বাড়াতে সংস্কার কার্যক্রমে হাত দেবে। ভ্যাট আদায় বাড়াতে জুন থেকে ইএফটি মেশিন স্থাপন কার্যক্রম শুরু করা হবে। বাড়ানো হবে কর আদায়ের ক্ষেত্র।অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, রিজার্ভ বাড়ানো নিয়ে চ্যালেঞ্জ আছে। রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য রেমিট্যান্সে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। আগামী দিনগুলোতে অর্থনীতিতে এসব সূচক যদি ঠিক না হয় তাহলে অর্থনীতিতে আরও চাপ সৃষ্টি হবে।

তিনি আরও বলেন, এ বছর জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে কিছুটা সমন্বয় করা হয়েছে। ভর্তুকির চাপ কমাতে আগামী দিনগুলোতে জ্বালানি তেলের মূল্য প্রতি তিন মাস অন্তর সমন্বয় করা হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর বিশ্ববাজারের গড় মূল্য ধরে এটি করা হবে।বৈশ্বিক সংকট ও অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায় নিয়ে এক ধরনের শঙ্কায় আছে সরকার। এ নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হয়। সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে আগামী অর্থবছরের জন্য এনবিআর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা।

এর মধ্যে এনবিআর কর হচ্ছে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, নন-এনবিআর কর ২০ হাজার কোটি টাকা এবং এনটিআর থেকে আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।ওই বৈঠকে আগামী দিনগুলোতে অর্থনীতি খাতের কিছু সম্ভাবনা তুলে ধরে বলা হয়, নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে, দেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন পরিস্থিতি ভালো হবে। এছাড়া বাড়বে রেমিট্যান্স, রপ্তানি ও রাজস্ব খাতের আয়ও।

সরকারি ব্যয়ের পরিমাণও বাড়বে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য দেশজ মোট উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়। অর্থ বিভাগের মতে, উল্লিখিত সূচক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে নিয়ামক হিসাবে কাজ করবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ