বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন

মানবদেহের ডিএনএ’র ভেতরে লুকিয়ে আছে ক্যানসার প্রতিরোধ ভাইরাস!

প্রতিনিধির / ৩৪ বার
আপডেট : সোমবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩
মানবদেহের ডিএনএ’র ভেতরে লুকিয়ে আছে ক্যানসার প্রতিরোধ ভাইরাস!
মানবদেহের ডিএনএ’র ভেতরে লুকিয়ে আছে ক্যানসার প্রতিরোধ ভাইরাস!

লাখ লাখ বছর ধরে মানবদেহের ডিএনএ’র ভেতরে লুকিয়ে আছে এমন একটি প্রাচীন ভাইরাসের ধ্বংসাবশেষ, যেটি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরকে সাহায্য করে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, শরীরে ক্যানসার কোষগুলো যখন ছড়িয়ে পড়ছে, তখন পুরোনো এই ভাইরাসের সুপ্ত থাকা অবশিষ্টাংশ জেগে উঠছে। এটা অবচেতনেই টিউমারকে টার্গেট বানিয়ে আক্রমণ করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।

গবেষক দল তাদের এই উদ্ভাবনকে এখন ক্যানসার চিকিৎসা বা প্রতিরোধের জন্য ভ্যাকসিন তৈরির কাজে লাগাতে চান। ফ্রান্সিস ক্রিক ইনস্টিটিউটের অ্যাসোসিয়েট রিসার্চ ডিরেক্টর প্রফেসর জুলিয়ান ডাউনওয়ার্ড বলেন, অ্যান্টিবডি যেসব ভাইরাসকে শনাক্ত করছে, সেগুলোর মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করছে সুপ্ত থাকা রেট্রোভাইরাস।বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের রেট্রোভাইরাল ইমিওনলিজির প্রধান প্রফেসর জর্জ ক্যাসিওটিস বলেন, প্রাচীন জেনেটিক নির্দেশনাগুলো আর নতুন করে ভাইরাসের পুনরুত্থান ঘটাতে পারে না, কিন্তু ভাইরাসকে খণ্ড খণ্ড করতে পারে। আর সেটাই শরীরের ভেতরে ভাইরাল থ্রেটকে বা রোগের হুমকিকে চিহ্নিত করতে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার জন্য যথেষ্ট। রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াটি একটি কৌশল যা বিশ্বাস করে যে, টিউমার কোষগুলো আক্রান্ত হয়েছে এবং এটা চেষ্টা করে ভাইরাসকে দূর করতে। সুতরাং এটা হলো একটা সতর্কীকরণ প্রক্রিয়া।

অ্যান্টিবডিগুলো রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অন্য অংশগুলো ডেকে তোলে আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলার জন্য। আর রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া ভাইরাসটিকে ঠেকাতে চেষ্টা করে, কিন্তু এই গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসারে আক্রান্ত কোষগুলোকে বের করে দিয়েছে। প্রফেসর জর্জ ক্যাসিওটিস বলছেন, রেট্রোভাইরাসের ভূমিকার এমন পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটা সময় হয়তো এই ভাইরাসই ক্যানসারের জন্য দায়ী ছিল, কিন্তু সেটিই এখন ক্যানসার থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে।‘ন্যাচার’ জার্নালে এই গবেষণা সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, কীভাবে শরীরে এটা স্বাভাবিকভাবে ঘটে। কিন্তু গবেষকরা এটাকে আরো এগিয়ে নিতে চান ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে। প্রফেসর ক্যাসিওটিস বলেন, এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে হয়তো চিকিৎসার জন্যই ভ্যাকসিন নয়, বরং আগেই প্রতিরোধের জন্যও ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারব। আশা করা হচ্ছে, এটি গবেষকদের ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যেসব পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছেন সেগুলোতেও সহায়তা করবে।

যুক্তরাজ্যের ক্যানসার গবেষক ড. ক্লেয়ার ব্রমলে বলেন, আমাদের সবার জিনের মধ্যে প্রাচীন ভাইরাসের ডিএনএ আছে, যা পূর্বতনদের কাছ থেকে এসেছে এবং এই চমৎকার গবেষণায় সেটিই উঠে এসেছে যে, কীভাবে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সেটিকে চিহ্নিত করে এবং ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনের জন্য হয়তো আরো গবেষণার প্রয়োজন, কিন্তু এই গবেষণা শরীরভিত্তিক গবেষণা এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। যার মাধ্যমে হয়তো একদিন ক্যানসার চিকিৎসা বাস্তবতায় পরিণত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ