বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

সুদান সংঘাতের তিন সপ্তাহ, আলোচনায় আগ্রহ বেড়েছে উভয় পক্ষেরই

প্রতিনিধির / ৪৮১ বার
আপডেট : রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২৩
সুদান সংঘাতের তিন সপ্তাহ, আলোচনায় আগ্রহ বেড়েছে উভয় পক্ষেরই
সুদান সংঘাতের তিন সপ্তাহ, আলোচনায় আগ্রহ বেড়েছে উভয় পক্ষেরই

সুদানে সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘাত বন্ধের সম্ভাবনা নিয়ে খানিকটা আশার বাণী শুনিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত জাতিসংঘের বিশেষ দূত ভলকার পার্থেজ। তার ভাষ্যমতে, এখন পর্যন্ত নিজেদের অবস্থানে অটুট থাকা দুই পক্ষই এখন আলোচনার জন্য বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে পার্থেজ বলেন, দুই পক্ষের মনোভাবে পরিবর্তন ও তারা যে আলোচনার জন্য আগের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে তা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। অথচ প্রথম সপ্তাহ ও তার পরেও তাদের কথাবার্তার মধ্যে মধ্যস্থতা বা আলোচনার বিষয়টি ছিলই না।

তিনি আরও বলেন, দুই পক্ষই আলোচনার জন্য প্রতিনিধি ঠিক করেছে। জেদ্দা বা দক্ষিণ সুদানের জুবায় আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে সেসব জায়গায় তারা আসলেই যাবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তবে এভাবে যুদ্ধ যে অব্যাহত থাকতে পারে না- এ বিষয়ে উভয় পক্ষই একমত হয়েছে।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি শক্তিগুলোর মধ্যস্থতায় একাধিকবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হওয়ার পরও দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিও রোববার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে।

শনিবার আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ) এক বিবৃতিতে বলে, তারা ওমডুরমানে সেনাবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। যুদ্ধবিরতি লংঘনের জন্য তারা সেনাবাহিনীকেই দায়ী করেছে।তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর কোনো প্রতিক্রিয়া জানতে পারেনি রয়টার্স। আরএসএফের বিমান গুলি করে ভূপাতিত করার দাবির সত্যতাও যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এর আগে সুদানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতি লংঘনের দায় আরএসএফের ওপর চাপিয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, শনিবার খার্তুমজুড়ে আগের দিনগুলোর তুলনায় কম সহিংসতা দেখা গেছে। কয়েকদিনের টানা সংঘাতের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুরের এল জেনেইনা শহরও তুলনামূলক শান্ত ছিল।

দুই পক্ষের সংঘাতে দারফুরেই নিহতের সংখ্যা ২০০ হয়েছে বলে জানিয়েছে দারফুর বার অ্যাসোসিয়েশন। আর আহতের সংখ্যা হাজারেরও বেশি বলে দাবি তাদের।এদিকে, দুই পক্ষের তুমুল লড়াই এখনো চলতে থাকায় শনিবারও অনেক বেসামরিক নাগরিককে শহর ছেড়ে পালাতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। এদিন বিকেলেও খার্তুম শহরতলীর পাশে অবস্থিত সেনা সদরদপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

এদিকে, অন্য দেশের সরকার তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। শনিবার মার্কিন সরকারের উদ্যোগে একটি বিমান বহর লোহিত সাগরের তীরবর্তী শহর পোর্ট সুদানে অবতরণ করে। এর পরপরই মার্কিন নাগরিক, স্থানীয় কর্মী ও অন্যদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয় বলে জানান মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‍মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

তিনি বলেন, যাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তাদের সৌদি আরবের জেদ্দায় পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার। তবে সুদানে এখনও কতজন মার্কিন নাগরিক আটকা পড়ে রয়েছেন, তা বলেননি মিলার।

ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সুদানের সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে অনেকদিন ধরেই বৈরী সম্পর্ক চলে আসছিল। সে বৈরিতা চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে সংঘর্ষে রূপ নেয়। তিন সপ্তাহ ধরে চলতে থাকা এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত কয়েকশ মানুষ নিহত হয়েছে ও হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। তাছাড়া, হাজার মানুষ দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে যাচ্ছেন।সুদানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিন সপ্তাহের এ সংঘাতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫২৮ জন নিহত হয়েছে ও সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে। তবে জাতিসংঘ বলছে, হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে। আর এ যুদ্ধের ফলে ৭৫ হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

Categories