শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

পাগলা মসজিদে এবার মিলল ১৯ বস্তা টাকা!

প্রতিনিধির / ৭২ বার
আপডেট : শনিবার, ৬ মে, ২০২৩
পাগলা মসজিদে এবার মিলল ১৯ বস্তা টাকা!
পাগলা মসজিদে এবার মিলল ১৯ বস্তা টাকা!

১১৮ দিন পর আবারও খোলা হলো কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের সিন্দুক। এবার পাওয়া গেল ১৯ বস্তা টাকা। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কঠোর নিরাপত্তা আর বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্টেটের তত্ত্বাবধানে খোলা হয় মসজিদের সব সিন্দুক। এরপর টাকাগুলো বস্তাবন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয় দু’তলায়। টাকাগুলো ভরতে ১৯টি বস্তার প্রয়োজন হয়।

এর আগে গত জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখে খোলা হয়েছিল সিন্দুক। তখন পাওয়া যায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এটি ছিল পাগলা মসজিদের সিন্দুকে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা। পাগলা মসজিদ সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এবার চার মাস পর সিন্দুক খোলা হয়েছে। কিছুটা দেরিতে খোলার কারণে আগের চেয়ে বেশি টাকা মিলতে পারে এবার।

৯০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যে ভরে যায় মসজিদের ৮টি সিন্দুক। এ কারণে সাধারণত তিন মাস পর পর খোলা হয় এগুলো। তবে এবার রোজাসহ নানা কারণে একটু দেরিতে খোলা হলো সিন্দুকগুলো।

পাগলা মসজিদের সিন্দুক খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সবশেষ গত ৭ জানুয়ারি খোলা হয়েছিল সিন্দুক। তখন পাওয়া যায় ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এর আগে গত বছরের ১ অক্টোবর খোলা হয় সিন্দুক। সেদিন পাওয়া যায় তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। ২ জুলাই বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার বাদে পাওয়া যায় তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫টাকা। তারও আগে গত বছরের মার্চে পাওয়া যায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।স্থানীয়রা জানান, সব সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে। ‘এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়’-এ বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে আসেন পাগলা মসজিদে। আর এ কারণে এই মসজিদের দানবাক্সে যে বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যায়, তা জেলার আর কোনো মসজিদে মিলে না। শুধু টাকা-পয়সাই নয়, টাকার সঙ্গে সোনা-রূপার অলঙ্কারসহ থাকে বিদেশি মুদ্রাও। আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় সিন্দুকে পাওয়া চিঠিপত্রগুলো। এসব চিঠিতে লোকজন তাদের জীবনের পাওয়া, না-পাওয়ার বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ ও রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে থাকেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুকের টাকা-পয়সা বস্তাবন্দি করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন। পরে বস্তাগুলো ধরাধরি করে মসজিদের দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অপেক্ষমান গণনাকারীদের সামনে ঢেলে দেওয়া হয় টাকাগুলো। এভাবেই শুরু হয় গণনার কাজ।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, পাগলা মসজিদের টাকা জমা হয় রূপালী ব্যাংকে, এই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মসজিদ কমিটির লোকজন, মাদরাসার ছাত্রসহ সবমিলিয়ে প্রায় দু-শাতাধিক লোক সারাদিন টাকাগুলো গুনবে।

মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র। কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া করোনা মহামারির সময় মসজিদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবায় যন্ত্রপাতি ও ওষুধপত্র কিনে দেওয়া হয়েছে। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেওয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে। এইসব সেবামূলক কর্মকাণ্ড সারাবছরই করে থাকে পাগলা মসজিদ কর্তৃপক্ষ।

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সদস্যর এনায়েত করিম অমি বলেন, ‘কেবল মুসলমান নয়, অন্য ধর্মের লোকজনও পাগলা মসজিদে বিপুল অঙ্কের টাকাপয়সা দান করেন। দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ পাগলা মসজিদ পরিদর্শনে আসে। যা প্রকৃত অর্থে বিরল একটি বিষয়।’মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বর্তমানে দানের টাকা জমানো হচ্ছে। এ টাকায় এখানে আন্তর্জাতিকমানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল কমপ্লেক্স হবে। যেখানে ৬০ হাজার মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকবে। নারীদের জন্য পৃথক নামাজের ব্যবস্থাও থাকবে সেখানে। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরো নানা আয়োজন। এ প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ শেষের পথে। এখন সবকিছু গুছিয়ে আনা হচ্ছে। খুব শিগগিরই হয়ত মূলকাজে হাত দিতে পারব আমরা।’

কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের বিবর্তনে আজ এ মসজিদের পরিধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে এর খ্যাতিও।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ