বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম সামান্য বেড়েছে গত এপ্রিল মাসে। এর ফলে টানা এক বছর নিম্নমুখী থাকার পর এই প্রথম ঊর্ধ্বমুখী হলো খাদ্যপণ্যের বাজার। এর মধ্যে ভোজ্য তেল ও গমের দাম কমলেও বেড়েছে চিনি, মাংস ও চালের দাম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সর্বশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এতে বলা হয়, গত এপ্রিল মাসে সার্বিক খাদ্যপণ্যের গড় সূচক ছিল ১৭২.২ পয়েন্ট, যা মার্চের চেয়ে ০.৬ শতাংশ বেশি। যদিও এটি ২০২২ সালের এপ্রিলের চেয়ে ১৯.৭ শতাংশ কম।বিশ্ববাজারে এক বছর পর বাড়ল খাদ্যপণ্যের দামএফএও জানায়, গত মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে চিনির দাম। মার্চের চেয়ে এপ্রিলে চিনির দাম বেড়েছে ১৭.৬ শতাংশ, যা ২০১১ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বোচ্চ দাম। খরার কারণে ভারত, চীন, থাইল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে উৎপাদন কমার আশঙ্কার পাশাপাশি ব্রাজিলেও মৌসুমের শুরুতে আখ আবাদ কম হওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ইথানল উৎপাদনেও আখ ব্যবহার বাড়তে পারে।
গত মাসে ভোজ্য তেলের দাম কমেছে ১.৩ শতাংশ। এর ফলে টানা পঞ্চম মাস কমল ভোজ্য তেলের দাম। বিশ্ববাজারে পাম তেলের দাম আগের অবস্থায় থাকলেও সয়াবিন, র্যাপসিড ও সূর্যমুখী তেলের দাম কমছে ভালো আবাদের কারণে। বিশেষত ব্রাজিলে সয়াবিনের রেকর্ড আবাদ হয়েছে। গত মাসে বিশ্ববাজারে মাংসের দাম বেড়েছে ১.৩ শতাংশ, বিপরীতে দুগ্ধপণ্যের দাম কমেছে ১.৭ শতাংশ।সংস্থা জানায়, বিশ্ববাজারে গত এপ্রিলে গমের দাম কমেছে ২.৩ শতাংশ। রাশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া থেকে বিপুল রপ্তানির সম্ভাবনায় বাজার নিম্নমুখী। এর পাশাপাশি ভুট্টার দামও কমেছে ৩.২ শতাংশ। তবে বেড়েছে চালের দাম।
এফএওর প্রধান অর্থনীতিবিদ ম্যাক্সিমো টরেরো বলেন, ‘খাদ্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং দেখছি, কী কারণে দাম বাড়ছে। বিশেষ করে অনেক দেশের অর্থনিতি মন্থর থেকে আবার গতিশীল হওয়ায় খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। ফলে দামও কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী।’ তিনি মনে করেন এই মুহূর্তে চালের দাম বৃদ্ধি কিছুটা উদ্বেগজনক। তাই কৃষ্ণসাগর চুক্তিটি নবায়ন করা প্রয়োজন, যাতে গম ও ভুট্টার দাম না বাড়ে।
এফএওর আগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, গত মার্চ মাসে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম আগের মাস ফেব্রুয়ারির চেয়ে কমেছে ২.১ শতাংশ। এর মধ্যে গমের দাম কমেছে ৭.১ শতাংশ, চালের দাম ৩.২ শতাংশ, ভুট্টার দাম ৪.৬ শতাংশ, ভোজ্য তেল ৩.০ শতাংশ এবং দুগ্ধপণ্যের দাম কমেছে ০.৮ শতাংশ।
যদিও গত মাসের শেষ দিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরবরাহ বৃদ্ধির বিপরীতে চাহিদা কমায় বিশ্ববাজারে প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম কমছে। এ বছর বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম কমবে ৮ শতাংশ। এর মধ্যে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে শুধু গমের দামই কমবে ১৭ শতাংশ। তবে এর বিপরীতে ২০২৩ সালে চালের দাম বাড়বে ১৭ শতাংশ।