মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সারাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো আট হাজারের বেশি বেসরকারি স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। ২০২১ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার। ২০২২ সালে তা কমে ১ লাখ ১০ হাজারের নিচে নেমেছে। এক বছরের ব্যবধানে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির (এপিএসসি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
করোনাকালীন শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়।অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদসহ শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে ২৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৮ হাজার ৮৩৮ জন শিক্ষার্থীর ওপর অভীক্ষা চালানো হয়।অনুষ্ঠানে গণশিক্ষা সচিব জানান, ২০২১ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার। ২০২২ সালে সে সংখ্যা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজারের কম। ৮ হাজারের বেশি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে।
তবে এ গবেষণার কড়া আপত্তি জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়তে পারে না বলে এ গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী জানান, তিনি এ তথ্য মানেন না। তার দাবি, এ গবেষণা সঠিক হয়নি।
গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের ৬৫ হাজার স্কুলের মধ্য থেকে মাত্র ২৪০টি স্কুল নিয়ে আপনারা যে ধারণা দিয়েছেন এর সঙ্গে আমার দ্বিমত রয়েছে। ক্লাস ফাইভের কোনো শিক্ষার্থী বাংলা পড়তে পারে না এটা আমি মানি না। আমি মনে করি এ গবেষণা সঠিক হয়নি। আমি যতগুলো স্কুলে গিয়েছি ক্লাস ফাইভে বাংলা পড়তে পারে না এমন দেখিনি। ইংরেজিতে ভুল হতে পারে। কিন্তু এটি কোন ধরনের গবেষণা আমি বুঝতে পারিনি। আমার কাছে এটি ভালো লাগেনি।করোনাকালীন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে সব শ্রেণি ও বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ওই গবেষণায় উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ ক্ষতির পরিমাণ সর্বনিম্ন।
জানা গেছে, দেশে সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও কয়েক হাজার কিন্ডারগার্টেন প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকে। তবে এ সময়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা কমেনি।বর্তমানে সারাদেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা কত, সরকারের কোনো সংস্থার কাছেই এ হিসাব পাওয়া যায়নি। এ সুযোগে কিন্ডারগার্টেনের মালিকরা এবং এক শ্রেণির গণমাধ্যম ও প্রচারমাধ্যমে ইচ্ছেমতো এ সংখ্যা প্রচার করা হচ্ছে।