শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০২:১১ অপরাহ্ন

বাইডেন প্রশাসন কি বেইজিংয়ের প্রতি নমনীয় হচ্ছে?

প্রতিনিধির / ১৬০ বার
আপডেট : সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩
বাইডেন প্রশাসন কি বেইজিংয়ের প্রতি নমনীয় হচ্ছে?
বাইডেন প্রশাসন কি বেইজিংয়ের প্রতি নমনীয় হচ্ছে?বাইডেন প্রশাসন কি বেইজিংয়ের প্রতি নমনীয় হচ্ছে?

চীনকে ঠেকিয়ে রাখা ছিল সাম্প্রতিক মার্কিন রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিক পার্টি পারষ্পরিক রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে এই ইস্যুতে একমত হয়। শুরুটা করেছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই বলে আসছিলেন যে. যুক্তরাষ্ট্রে বেকারের সংখ্যা বাড়ার অন্যতম কারণ চীন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি সে দেশ থেকে কিছু ব্যবসা গুটিয়ে আনেন এবং বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অনেক বিধিনিষেধ আরোপ করেন।

চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের দুটো প্রধান রাজনৈতিক দলই প্রায় উঠে পড়ে লেগেছিল। চীনের পরমাণু কর্মসূচি থেকে চায়নিজ ফুড পর্যন্ত এমন কিছু বাকি ছিল না, যেগুলো নিয়ে তারা প্রতিবন্ধকতা আরোপের চেষ্টা করেনি। শেষ পর্যন্ত কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বলা যেতে পারে বেইজিংই এ থেকে লাভবান হয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সম্ভবত বিষয়টি বুঝতে পেরেছে।

তারা লক্ষ্য করছে বেশি মাত্রায় চীন বিরোধিতা সাধারণ মানুষের কাছে এশিয়াবিরোধী মনোভাবই তুলে ধরবে। রিপাবলিকান পার্ির্টর কর্মসূচিতে আটকে থাকাটা ডেমোক্র্যাটদের জন্য রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচায়ক নয়। তাছাড়া আরেকটি অর্থনৈতিক মন্দার লক্ষণ যখন দেখা যাচ্ছে, এরকম সময় চীনের মতো একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বাস্তবসম্মত নয়। তাছাড়া চীন যে মার্কিন করপোরেট লাভের সুবিধা নিচ্ছে, সেটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোনো জাতীয় নিরাপত্তাসঙ্কট তৈরি করেনি। গত বছর মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর চীন-মার্কিন সম্পর্কে যথেষ্ট অবনতি ঘটেছিল। তারপর পরিস্থিতির আর অবনতি ঘটেনি। বরং এ সময়ের মধ্যে দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে ফোনে আলাপ বা সামনাসামনি বৈঠকও হয়েছে।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান সম্প্রতি বলেছেন, ‘(চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে) আমরা ঝুঁকি কমাতে চাই, আমরা চাই সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে। একইসঙ্গে আমাদের কর্মীরা যেন বৈষম্য বা কোনো অন্যায়ের শিকার না হয়, সেটিও নিশ্চিত করা। চীন-মার্কিন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারক মহল থেকে সাম্প্রতিক সময়ে এর চেয়ে নমনীয় কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি।

ডেমোক্র্যাট দলীয় জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর দুই বছর রিপাবলিকানদের সঙ্গে চীন ইস্যুতে যে ঐকতান ছিল সুলিভানের এ ঘোষণার ফলে তার অবসান ঘটল। ট্রাম্প যে আপাদমস্তক চীনবিরোধী ছিলেন, বিষয়টি তাও নয়। মিডিয়ায় অবশ্য তিনি এভাবেই পরিচিতি পেয়েছেন। বৈশ্বিক ব্যবস্থার সঙ্গে চীনকে সমম্বিত করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনও কাজ করেছে। একুশ শতকের প্রথম থেকেই বৈশ্বিক অঙ্গনে চীন নিজের অবস্থানটি পোক্ত করে চলেছে। বর্তমান ইউক্রেন যুদ্ধের সময়ও দেখা যাচ্ছে দেশটি কেবল উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, সামরিক বা কূটনীতির ক্ষেত্রেও তাদের উপেক্ষা যায় না। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সম্পর্ক জোড়া লাগানো এবং সিরিয়াকে আরব লীগে ফিরিয়ে আনার মতো কূটনৈতিক সাফল্যও দেখিয়েছে দেশটি।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনও চীনের বিরুদ্ধে লাখ লাখ সরকারি নথি চুরির অভিযোগ করেছিল। তবে সেটি নিয়ে বেশি দূর এগোননি ওবামা। ট্রাম্প এসে চীনের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন। একই সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও যুক্তরাষ্ট্র সফল করেন। ট্রাম্প ছিলেন বিশ্বায়ন ও মুক্তবাণিজ্যবিরোধী। চীনবিরোধী পদক্ষেপ তার এই নীতিরই প্রতিফলন ছিল।

এসব কারণে তার সময়ে ওয়াল স্ট্রিটের বিনিয়োগকারীদের চেয়ে ডানপন্থি রাজনীতিবিদরাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। ট্রাম্প ২০১৮ সালে বিভিন্ন চীনা পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দেশটির বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ হে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। দুই নেতা ঐ সময় ’ফেজ ওয়ান’ বাণিজ্যচুক্তি সই করেন। চুক্তির মূল কথা ছিল চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য আমদানি করবে, বিনিময়ে তারা শুল্ক ছাড় পাবে।

২০১৮ সালের পর চীনের সঙ্গে যু্ক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যলঘু জাতিগত উইঘুর নির্যাতন, হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন শক্তি প্রয়োগ করে দমন, তাইওয়ানকে বারংবার হুমকির মতো একটার পর একটা ইস্যু দুই দেশের সম্পর্কে শুধুই উত্তেজনা বাড়িয়েছে।

সবশেষ এ বছর শুরুর দিকে বেলুন নিয়ে আরেক দফা টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল। যাই হোক, বাইডেন এখন চাইছেন, দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা কমিয়ে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করে আনা। বিশ্লেষকদের মতে, তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করতে পারবেন না। মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো সস্তা শ্রমের জন্য এখনো চীনের ওপর নির্ভরশীল। তবে বেইজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনার পথে না হাঁটার সিদ্ধান্ত রিপাবলিকান দলের বিপরীতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা দেবে বলে মনে হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ