মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

নির্যাতনের পর ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

প্রতিনিধির / ২১২ বার
আপডেট : শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩
নির্যাতনের পর ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ
নির্যাতনের পর ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ

শরীয়তপুরের জাজিরার পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এক মামলায় চার আসামিকে নিয়ে ব্যাপক নির্যাতনের পর ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপার তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসিকে জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার নাওডোবা এলাকায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।২৩ মে নাওডোবার বাসিন্দা বকুল চোকদার, সাদ্দাম চোকদারসহ ৯ জনকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় মামলা করেন জাজিরার বয়াতি কান্দি গ্রামের শাহিন আলম শেখ।ওই মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী ঠাণ্ডু চোকদারের আত্মীয়দেরও আসামি করা হয়। ২৯ মে মামলার চার আসামি বকুল, সাদ্দাম, সাইদুল ও আনোয়ার উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন পান। এরপর তাঁরা ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি বাসায় অবস্থান করছিলেন।

ওই রাতেই নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ওই বাড়িতে যায়। সাদ্দাম তাঁদের জামিনের কাগজ দেখানো মাত্র ছিঁড়ে ফেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল। সেখানেই একটি কক্ষে আটকে চারজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এক পর্যায়ে চারজনকে গামছা ও কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে করে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নিচে নেওয়া হয়।পরে সাদ্দাম-বকুল ও সাইদুল-আনোয়ারকে পৃথক দুই স্থানে নিয়ে গিয়ে ৭২ লাখ টাকার জন্য বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখানো হয়। সবশেষে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় গিয়ে লাঠি (ডাণ্ডা), কাঠ ও হাতুড়ি দিয়ে তাদের বেধড়ক মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে প্লায়ার্স দিয়ে হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়। এভাবে সারা রাত বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন চলে। পরদিন ৭২ লাখ টাকার জন্য বকুলের স্ত্রী, সন্তান, স্ত্রীর বাবা-মা ও চাচাতো ভাই ঠাণ্ডু চোকদারকে থানায় এনে আটকে রাখা হয়।

এ সময় তাঁদের মানসিক নির্যাতন করা হয়। পরে তাঁদের স্বজনরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির কাছে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা লিখে দিলে তাঁদের ছাড়া হয়।২৯ মে রাতে গ্রেপ্তার করা হলেও ১ জুন ওই চারজনকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করেন পদ্মা দক্ষিণ থানার পরিদর্শক তদন্ত সুরুজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি আসামিদের আদালতে উপস্থাপন করার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিদের গ্রেপ্তারের সময় ধস্তাধস্তিতে শরীরে নীলাফুলা জখম হয়েছে।

তাঁদের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক রিমান্ড নামঞ্জুর করেন। নির্যাতনের ঘটনায় বিচার চেয়ে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ঠাণ্ডু চোকদার ২ জুন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেন। ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে। ৬ জুন সাদ্দাম ও বকুলসহ চারজনই আদালত থেকে জামিন পান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় ওসি মোস্তাফিজুর রহমান ও নড়িয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের মোবাইলে ফোন দিলেও তাঁরা ধরেননি। পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার একটি সূত্র জানিয়েছে, ওসি মোস্তাফিজুর রহমানকে গতকাল জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ