বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের বলি বেড়ে ৩৯, কোথায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী?

প্রতিনিধির / ৮১ বার
আপডেট : রবিবার, ৯ জুলাই, ২০২৩
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের বলি বেড়ে ৩৯, কোথায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী?
পশ্চিমবঙ্গে ভোটের বলি বেড়ে ৩৯, কোথায় ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী?

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সহিংসতার বলি হলেন ১৭ জন। রবিবারও কুলতলি থেকে একজন তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর খবর এসেছে। গুলি, বোমা, বুথ দখল, বিক্ষোভ, মারামারি—কী হয়নি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। মনোনয়ন পর্ব থেকে শুরু করে ভোট পর্যন্ত প্রাণ গেছে মোট ৩৯ জনের।

এদিকে নির্বাচন যাতে শান্তিপূর্ণ হয়, তার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, প্রতিটি বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। শনিবার পর্যন্ত রাজ্যে ৬৫০ কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী গেছে। সাধারণত এক কম্পানিতে ১০০ থেকে ১২৫ জন সৈনিক থাকেন। ক্ষেত্রবিশেষে তার বেশিও হতে পারে।এক কম্পানিতে ১০০ জন সৈনিক ধরলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ৬৫ হাজার সৈনিক ওই রাজ্যে গেছে।

কিন্তু শনিবার ভোটের দিন অনেক বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোনো সৈনিককে দেখা যায়নি। তার পরই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে তারা গেলেন কোথায়? যেসব জেলায় ভয়াবহ সহিংসতা হয়েছে, সেখানে কেন সব বুথে তারা ছিলেন না? রাজ্য নির্বাচন কমিশন কি এইভাবে হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করতে পারে?রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন বিএসএফের আইজি বুদাকোটি। তিনি কমিশনকে জানিয়েছিলেন, রাজ্যে যে উত্তেজক পরিস্থিতি রয়েছে, তাতে একজন সৈনিক রাখলে তাদের নিরাপত্তার চিন্তা থাকছে।

তাই প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত চার থেকে পাঁচজন সৈনিককে মোতায়েন করতে হবে। একটি ভোটকেন্দ্রে একাধিক বুথ থাকে।
রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিং প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে এত দেরি হলো কেন? আমরা তো ২২ তারিখ তাদের জানিয়েছিলাম। তারপর বেশ কয়েকবার মনে করিয়ে দিয়েছি। তার পরও ৩ জুলাই ৪৮৫ কম্পানি বাহিনী এলো।আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, বাহিনী কোথায় মোতায়েন করা হবে তা আগে থেকে জানাতে হয়। সেই মতো ট্রেন ও অন্য যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে হয়। এর জন্য সময় লাগে। নির্বাচন কমিশনের অসহযোগিতার কারণেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর যেতে দেরি হয়েছে।

পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের পার্থক্য আছে। এখানে অনেক বেশি বুথ থাকে। সাংবাদিক আশিস গুপ্ত বলেছেন, ‘সব বুথে প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট করতে গেলে আড়াই লাখ সৈনিক লাগবে। ভোটের দিন কয়েক আগে ৬৫-৭০ হাজার সৈনিক আসবে, তাদের গ্রামে গ্রামে মোতায়েন করা যাবে বলে যারা মনে করছেন, তারা বাস্তবসম্মত চিন্তা করছেন না। ফলে লোকসভা ভোটে যা সম্ভব, তা পঞ্চায়েত ভোটে সম্ভব নাও হতে পারে।’সাংবাদিক শরদ গুপ্তার মতে, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের। লোকসভা ভোটে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের হাতে দায়িত্ব থাকে। ফলে তারা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মোতায়েন করে নির্বাচন করতে পারে। পঞ্চায়েত ভোট করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।’

এবার পঞ্চায়েত ভোটে দেখা গেছে, তৃণমূলেরও প্রচুর কর্মী মারা গেছেন। কোথাও আইএসএফ, কোথাও বাম, কোথাও কংগ্রেস এবং কোথাও বিজেপিও পাল্টা মারের রাস্তায় গেছে। কোথাও তো গ্রামবাসীরা ভোট দিতে না পেরে বুথ ঘেরাও করে রেখেছেন। ব্যালট বাক্স পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। কোথাও গ্রামবাসীরা সন্ত্রাস করতে আসা মানুষকে তাড়া করেছেন, ধরতে পারলে মারধর করেছেন।আশিস গুপ্ত মনে করেন, ‘এটা হবেই। কারণ, বিরোধী দলগুলোর অস্তিত্বসংকট দেখা দিয়েছে। শাসক দলের পক্ষ থেকে যে কাণ্ড করা হচ্ছে, তাতে তাদের টিকে থাকতে গেলে প্রতিরোধ করতে হতোই। তাই তারাও কিছু এলাকায় একই পন্থায় তৃণমূলকে ঠেকাতে গেছে। লোকসভা ভোটের সময় এ রকম ঘটনা বাড়তেই পারে।’

শরদও মনে করেন, ‘পঞ্চায়েতকে ঘিরে সহিংসতার যে ছবি দেখা গেছে, তাতে এটা স্বাভাবিক। ভাঙরে মনোনয়নপত্র যাতে জমা দিতে না পারে, সে জন্য বিডিও অফিস কার্যত ঘিরে রেখেছিল শাসক দলের কর্মীরা। বোমা ও গুলির বন্যা বয়ে গেছে। রাজনীতিতে কোনো কিছুই তো একতরফা হতে পারে না।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ